মিফতাহুল জান্নাত নামের অর্থ কি
মিফতাহুল জান্নাত নামের অর্থ কি
মিফতাহুল
জান্নাত শব্দটির অর্থ হলো জান্নাতের চাবি। মিফতাহুল শব্দখানার অর্থ
চাবী ও জান্নাত মানে উদ্যান বা বাগান। পুরো শব্দটির মানে দাড়াচ্ছে
জান্নাতের চাবি।
মিফতাহুল
জান্নাত নামের অর্থ কি তা জানার পর আমরা আজকে জানবো যে জান্নাত বাসীগণের জন্য
মহান আল্লাহপাক কি কি নিয়ামত রেখেছেন সেগুলো।
কাউকে কি জান্নাতী বলা যায়
নির্দিষ্ট
করে কোনো ব্যক্তিকে বলা
যে, সে জান্নাতী এটা
নাজায়েয: কে জান্নাতী আর
কে জাহান্নামী তার সঠিক জ্ঞান
একমাত্র আল্লাহরই আছে:
অর্থ:
“উম্মুল আলা আনসারী (রাঃ)
নবী (সাঃ) -এর নিকট যারা
বাইয়াত করেছিল তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেছেন: লটারীর
মাধ্যমে মুহাজিরদেরকে আনসারদের মাঝে বণ্টন করা
হয়েছিলো, আমাদের ভাগে ওসমান বিন
মাযউন (রাঃ) পড়েছিল, আমরা
তাকে আমাদের ঘরে উঠালাম, তখন
সে অসুস্থ হয়ে ঐ রোগে
মৃত্যুবরণ করলো।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর তাকে
মৃত্যুর
পর তাকে গোসল দিয়ে
কাফন পরানো হলো, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
আসলেন, আমি বললাম হে
আবু সায়েব, (ওসমান বিন মাযউন (রাযিয়াল্লাহু
আনহু এর কুনিয়াত) তোমার
প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তোমার
ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আল্লাহ তোমাকে ইয্যত দিক, রাসূল (সাঃ)
বললেন: উম্মুল আলা তুমি কি
করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে
ইযযত দিয়েছেন, আমি বললাম: ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা
আপনার জন্য কুরবান হোক!
আল্লাহ কাকে ইয্যত দিবেন?
হযরত উসমান
রাঃ
এর
ইন্তেকাল
তিনি
বললেন: নিঃসন্দেহে ওসমান ইন্তেকাল করেছে, আল্লাহর কসম! আমি নিজেও
জানি না যে কিয়ামতের
দিন আমার কি অবস্থা
হবে? অথচ আমি আল্লাহর
রাসূল। উম্মুল আলা (রাঃ) বলেন:
আল্লাহর কসম! এর পর
আমি আর কারো ব্যাপারে
বলি নি যে সে
পাপ মুক্ত।” (বুখারী)
কাউকে কি জান্নাতী বলা যায়
(১)
নবী (সাঃ) যে সমস্ত সাহাবাগণের
নাম নিয়ে তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদেরকে জান্নাতী বলা জায়েয আছে।
আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবেনা
(২)
নিজের ব্যাপারে নবী (সাঃ) যে
কথা বলেছেন, তা হলো আল্লাহর
বড়ত্ব, গৌরব, অ-মুখাপেক্ষিতা ও
ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বলেছেন, যার
বাহ্যিকতা অন্য হাদীসে এভাবে
এসেছে যে, কোনো ব্যক্তি
তার নিজের আমল দ্বারা বেহেশতে যেতে
পারবে না, তবে হ্যাঁ আমার প্রভু স্বীয়
রহমত দ্বারা আমাকে ঢেকে রাখবেন। (মুসলিম)
হাবশায় সর্বপ্রথম কতজন মুসলিম হিজরত করেন
(৩)
উসমান বিন মাযউন (রাঃ)
দুই বার হাবশায় হিজরতের
সুযোগ লাভ করেছিলেন। এরপর
তৃতীয় বার মদীনায় হিজরতের
সুযোগ লাভ করেছিলেন। তার
মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
তিনবার তার কপালে চুমু
দিয়ে বলেছিলেন যে, তুমি পৃথিবী
থেকে এমনভাবে বিদায় নিয়েছো যে তোমার আচল
পৃথিবীর সাথে বিন্দু পরিমাণেও
একাকার হয়ে যায়নি। এরপরও
তার ব্যাপারে এক মহিলা তাকে
জান্নাতী বলে আখ্যায়িত করলে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বাধা দিলেন।
যুদ্ধের ময়দানে
এক
ব্যক্তি
নিহত
যুদ্ধের
ময়দানে এক ব্যক্তি নিহত
হলে সাহাবাগণ তাকে জান্নাতী মনে
করতে লাগলো তখন রাসূলূল্লাহ (সাঃ)
বললেন: কখনো নয় সে
জাহান্নামী
অর্থ:
“ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) জিজ্ঞেস করা হলো ইয়া
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! ওমুক ব্যক্তি শাহাদাত
বরণ করেছে তিনি বললেন: কখনো
নয় গণীমতের মাল থেকে একটি
চাদর চুরি করার কারণে
আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি।”
(তিরযিমী ৪/১৫৭৪)
কাউকে কি নিশ্চিত জান্নাতী বলা যায়
কোনো
জীবিত বা মৃত ব্যক্তি
চাই সে বড় মোত্তাকী,
আলেম, ওলী, পীর, ফকীর,
দরবেশই হোক না কেন
তাকে নিশ্চিত জান্নাতী বলা না জায়েয:
অর্থ:
“আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলাইহি বলেছেন: কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ
সময় পর্যন্ত জান্নাতে যাওয়ার আমল করতে থাকে,
শেষ পর্যায়ে সে আবার জাহান্নামে
যাওয়ার আমল শুরু করে
এবং এ অবস্থায় সে
মৃত্যুবরণ করে। আবার কোনো
ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জাহান্নামে
যাওয়ার আমল করতে থাকে
এরপর শেষ পর্যায়ে জান্নাতে
যাওয়ার আমল শুরু করে
এবং এ অবস্থায় সে
মৃত্যুবরণ করে।” (মুসলিম ৪/২৬৫১)
জান্নাতে যাওয়ার সহজ উপায়
আমল করতে পারে
অর্থ:
“সাহাল বিন সা'দ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: মানুষের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি জান্নাতে
যাওয়ার আমল করতে পারে,
অথচ সে জাহান্নামী হবে,
আবার মানুষের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে
যাওয়ার আমল করতে পারে
অথচ সে জান্নাতী হবে।”
(মুসলিম)
নোট:
এমনিতেই তো কবর ও
মাযারসমূহে নযর-নেয়াজ দেয়া
বিভিন্ন জিনিস লটকানো বড় শিরক, এ
হাদীসের আলোকে এটি একটি অর্থহীন
কাজও বটে। আর তা
এজন্য যে, যে কোনো
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে
তোমরা কি
উঁকি
দিয়ে
দেখবে
আল্লাহ
বলবেন, ‘তোমরা কি উঁকি দিয়ে
দেখবে?' অতঃপর সে উঁকি দিয়ে
দেখবে এবং তাকে (পৃথিবীর
সঙ্গীকে) দেখবে জাহান্নামের মধ্যস্থলে। সে বলবে, ‘আল্লাহর
কসম! তুমি তো আমাকে
প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলে'।
‘আমার রবের অনুগ্রহ না
থাকলে আমিও তো (জাহান্নামে)
হাযিরকৃতদের একজন হতাম'।
(জান্নাতবাসী ব্যক্তি বলবে) ‘তাহলে আমরা কি আর
মরব না’?
পার্থিব জীবন
ক্রীড়া
কৌতুক
জান্নাতীরা
তাদের বৈঠকসমূহে পৃথিবীর জীবনের কথা স্মরণ করবে:
অর্থ:
আর তারা একে অপরের
মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে,
তারা বলবে, ‘পূর্বে আমরা আমাদের পরিবারের
মধ্যে শঙ্কিত ছিলাম।' 'অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং
আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে
রক্ষা করেছেন।' নিশ্চয় পূর্বে আমরা তাঁকে ডাকতাম;
নিশ্চয় তিনি ইহসানকারী, পরম
দয়ালু। (সূরা তূর ২৫-২৮)
আরাফের অধিবাসীগণ
জান্নাত
জাহান্নামের
মাঝে
একটি
উঁচু
স্থানে
জান্নাত
জাহান্নামের মাঝে একটি উঁচু
স্থানে কিছু লোক জীবন
যাপন করবে তাদেরকে আরাফের
অধিবাসী বলা হয়:
আরাফের
অধিবাসীদের পাপ ও সাওয়াব
বরাবর হবে তাই তারা
জান্নাতেও যেতে পারবেন না
জাহান্নামে, কিন্তু আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে
জান্নাতে যাওয়ার আশাবাদী তারা হবে:
অর্থ:
আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আরাফের১৮ উপর
থাকবে কিছু লোক, যারা
প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের
অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, ‘তোমাদের উপর
সালাম'। তারা (এখনো)
তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা
করবে। (সূরা আ'রাফ
৭:৪৬)
আরাফের অধিবাসীরা
জাহান্নামীদেরকে
দেখে
নিম্নোক্ত
দুআ
পাঠ
করবে:
অর্থ:
আর যখন তাদের দৃষ্টিকে
আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তারা বলবে,'হে আমাদের রব!
আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না'। (সূরা
আ'রাফ ৪৭)
জান্নাত ও
জাহান্নামের
মধ্যবর্তী
প্রাচীরকে
আরাফ
বলে
দু'টি
বিরোধপূর্ণ
বিশ্বাস
ও
তার
দু'টি
বিরোধ
পূর্ণ
প্রতিফল
মাসআলা-৪০৬: পৃথিবীতে সুখ-শান্তি ও নিয়ামত পেয়ে
আনন্দে বসবাসকারী কাফির পৃথিবীতে ঈমানদারদের সাধারণ জীবন যাপন দেখে
হাসত এবং বিদ্রুপ করতো,
পরকালে ঈমানদাররা জান্নাতের নিয়ামত ও আনন্দে জীবন
যাপন করবে এবং কাফিরদের
দুরবস্থা দেখে হাসবে এবং
তাদেরকে বিদ্রুপ করবে:
মুমিনের হিফাযতকারী
হিসেবে
পাঠানো
হয়নি
অর্থ:
নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে
তারা মু'মিনদেরকে নিয়ে
হাসতো। আর যখন তারা
মু'মিনদের পাশ দিয়ে যেত
তখন তারা তাদেরকে নিয়ে
চোখ টিপে বিদ্রূপ করতো।
আর যখন তারা পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতো
তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে
ফিরে আসতো।
আর
যখন তারা মু'মিনদেরকে
দেখত তখন বলতো, ‘নিশ্চয়
এরা পথভ্রষ্ট'। আর তাদেরকে
তো মু'মিনদের হিফাযতকারী
হিসেবে পাঠানো হয়নি। অতএব আজ মু'মিনরাই কাফিরদেরকে নিয়ে হাসবে। উচ্চ আসনে বসে
তারা দেখতে থাকবে। কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হলো তো? (সূরা
মুতাফফিফীন ২৯-৩৬)
পৃথিবীতে জান্নাতের
সবচেয়ে
বড়
নিয়ামত
হাজরে আসওয়াদ পাথর (কাল
পাথর)
আজওয়া খেজুর
জান্নাতী
ফল
(এক
প্রকার
উন্নত
মানের
খেজুরের
নাম)
মাকামে ইব্রাহিম অর্থ কি
(মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের
পাথর)
যাইতুন অর্থ কি (যাইতুন
জান্নাতের
একটি
গাছ)
অর্থ:
“রাফে' বিন আমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন: আজওয়া খেজুর, পাথর (মাকামে ইবরাহীম) এবং (বৃক্ষ) যাইতুন
গাছ জান্নাত থেকে আনিত।” (হাকেম)
হুজরা কাকে বলে (রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)
-এর
হুজরা)
ও
মিম্বরের
মধ্যবর্তীস্থান
জান্নাতের
একটি
অংশ
অর্থ:
“আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমার
হুজরা ও মিম্ববরের মধ্যবর্তীস্থান
জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যে একটি বাগান, আর
আমার মিম্বর আমার হাউজের ওপর।”
(বুখারী ২/১১৯৬)
জান্নাতের সুগন্ধির নাম
(মেহেদী জান্নাতের সুগন্ধিসমূহের
মধ্যে
একটি)
অর্থ:
“আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন: জান্নাতীদের জন্য সুঘ্রাণসমূহের মধ্যে
স্রেষ্ট সুঘ্রাণ হবে মেহেদীর সুঘ্রাণ।”
(ত্বারাবানী)
বকরি অর্থ (বকরী
জান্নাতের
প্রাণীসমূহের
মধ্যে
একটি
প্রাণী)
অর্থ:
“আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: বকরী জান্নাতের প্রাণীসমূহের
মধ্যে একটি প্রাণী, তার
থাকার স্থান থেকে তার পায়খানা
ও পেশাব পরিষ্কার করো এবং সেখানে
নামায আদায় করো।”
বুতহান উপত্যকা
জান্নাতের
উপত্যকা
সমূহের
মধ্যে
একটি
উপত্যকা
বুতহান
জান্নাতের উপত্যকা সমূহের মধ্যে একটি উপত্যকা।” (বাযযার)"
নোট:
বুতহান মদীনার নিটকবর্তী স্থান কুবার পার্শ্বস্থ একটি উপত্যকা।
পোস্ট ট্যাগঃ