জাহান্নামের আগুনের রং কি
জাহান্নামের আগুনের রং কি
আরবি
শব্দ 'জাহান্নাম' এর বাংলা অর্থ হলো অগ্নির গর্ত বা ভয়াবহ শাস্তির জায়গা। মানুষ
ও জ্বীন জাতির জন্য ভয়াবহ আজাবের জায়গা হিসেবে মহান আল্লাহপাক জাহান্নাম তৈরি করেছেন।
আজকের পোস্টের মাধ্যমে জানবো জাহান্নামের আগুনের রং কি এবং জাহান্নামীদের খাবার কি
হবে তার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
জাহান্নামের আগুনের
রং
জাহান্নামের
আগুনের রং হবে কালো বর্ণের,
ভয়ংকর কালো আগুন। যা দেখেই মানুষের কলিজা কেপে যাবে ও মানুষ জাহান্নামে বেহুশ হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করুন আমিন। আমরা কোনো ধরনের গুনাহের
কাজ করবো না যেনো আমরা জাহান্নামে না যায়।
আমদেরকে
যেনো আল্লাহপাক জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন আমিন।
জাহান্নামের আগুনের রং জানার পর এখন নিচে আমরা জানবো জাহান্নামীদের খাবারসমূহ কি তা।
জাহান্নামীদের পানীয়
জাহান্নামীদেরকে
নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার পানীয়
দান করা হবে:
১. গরম
পানি
২. ক্ষত
স্থান
থেকে
নির্গত
পুঁজ
ও
রক্ত
৩. তৈলাক্ত
গরম
পানীয়
৪. কাল
দুর্গন্ধময়
পানীয়
৫. জাহান্নামীদের
ঘাম
১. গরম
পানি
জাক্কুম
ফল খাওয়ার পর জাহান্নামীদেরকে উত্তপ্ত
পানি পান করার জন্য
দেয়া হবে:
অর্থ:
“এটা থেকে তারা অবশ্যই
ভক্ষণ করবে এবং উদর
পূর্ণ করবে তা দ্বারা,
তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত
পানির মিশ্রণ।” (সূরা সাফফাত ৬৬-৬৭)
নোট:
মনে হচ্ছে জাক্কুম ফল বৃক্ষ এবং
উত্তপ্ত পানির ঝর্ণা জাহান্নামের কোনো বিশেষ এলাকায়
থাকবে, যখন জাহান্নামীদের ক্ষুধা
ও পিপাসা লাগবে তখন তাদেরকে ঐ
স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এর পর
আবার জাহান্নামে তাদের অবস্থান স্থলে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। (আশরাফুল
হাওয়াসী)
জাক্কুম ফল
খাওয়ার
পর
জাহান্নামীরা
জাক্কুম
ফল খাওয়ার পর জাহান্নামীরা তৃষ্ণার্ত
উটের ন্যায় উত্তপ্ত পানি পান করতে
থাকবে:
অর্থ:
তারপর হে পথভ্রষ্ট ও
অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই জাক্কুম ফল গাছ থেকে
খাবে, অতঃপর তা দিয়ে পেট
ভর্তি করবে। তদুপরি পান করবে প্রচণ্ড
উত্তপ্ত পানি। অতঃপর তোমরা তা পান করবে
তৃষ্ণাতুর উটের ন্যায়। প্রতিফল
দিবসে এই হবে তাদের
মেহমানদারী, (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ৫১-৫৬)
ফুটন্ত
পানি পান করা মাত্রই
জাহান্নামীদের নাড়ী-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে
জাহান্নামের আজাব
অর্থ:
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা
দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো,
তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত
হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সূরার
নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত
মধুর ঝর্ণাধারা।
২. ক্ষত
স্থান
থেকে
নির্গত
পুঁজ
ও
রক্ত
জাহান্নামীদের
ক্ষত স্থান থেকে নির্গত রক্ত
ও পুঁজ বা ফুটন্ত
পানি ও জাহান্নামীদেরকে পান
করার জন্য দেয়া হবে
যা তারা অতি কষ্টে
গলধকরণ করবে:
অর্থ:
এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান
করানো হবে গলিত পুঁজ
থেকে। সে তা গিলতে
চাইবে এবং প্রায় সহজে
সে তা গিলতে পারবে
না। আর তার কাছে
সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেয়ে
আসবে, অথচ সে মরবে
না। আর এর পরেও
রয়েছে কঠিন আজাব। (সূরা
ইবরাহীম ১৬-১৭)
৩. তৈলাক্ত
গরম
পানীয়
তৈলাক্ত
ফুটন্ত গাঢ় দুর্গন্ধময় পানীয়
জাহান্নামীদেরকে পান করার জন্য
দেয়া হবে:
অর্থ:
“তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর
ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল
বিদগ্ধ করবে, এটা নিকৃষ্ট পানীয়
ও অগ্নি কত নিকৃষ্ট আশ্রয়।”
(সূরা কাহাফ ২৯)
নোট:
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)-কে একদা স্বর্ণ
দেখানো হলো, যা গলে
পানির ন্যায় হয়ে গিয়েছিল এবং
ফুটতে ছিল তখন তিনি
বললেন এটা গলিত ধাতুর
ন্যায়।” (ইবনে কাসীর)
গরম
তৈলাক্ত পানীয় জাহান্নামীর মুখে দেয়া মাত্রই
তাদের চেহারা বিদগ্ধ হয়ে যাবে:
অর্থ:
“আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সা| বলেছেন: জাহান্নামীদের
পানীয় বিগলিত উত্তপ্ত পানি ফুটন্ত তৈলের
ন্যায় হবে। জাহান্নামীরা তা
পান করার জন্য স্বীয়
মুখের নিকট নেয়া মাত্রই
তার চেহারাকে বিদগ্ধ করে দিবে।” (হাকেম)
৪. কাল
বিষাক্ত
দুর্গন্ধময়
পানীয়
উল্লেখিত
৩টি পানীয় ব্যতীত অত্যধিক কাল বিষাক্ত দুৰ্গন্ধ
ময় পদার্থও জাহান্নামীদেরকে পানীয় হিসেবে দেয়া হবে
অর্থ:
এমনই, আর নিশ্চয় সীমালংঘনকারীদের
জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম নিবাস। জাহান্নাম, তারা সেখানে অগ্নিদগ্ধ
হবে। কতই না নিকৃষ্ট
সে নিবাস! এমনই, সুতরাং তারা এটি আস্বাদন
করুক, ফুটন্ত পানি ও পুঁজ।
আরও রয়েছে এ জাতীয় বহুরকম
আজাব। (সূরা সোয়াদ ৫৫-৫৮)
গাসসাক পানীয় এত বিষাক্ত ও
দুর্গন্ধময় যে এর এক
বালতি সমগ্র পৃথিবীতে দুর্গন্ধময় করার জন্য যথেষ্ট
হবে:
৫. জাহান্নামীদের
ঘাম
পৃথিবীতে
নেশা ও মদপান কারীদেরকে
আল্লাহ জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত
গাঢ় দুর্গন্ধময় বিষাক্ত ঘাম পান করাবেন
অর্থ:
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: প্রত্যেক
নেশাযুক্ত জিনিস হারাম, আর আল্লাহ অঙ্গীকার
করেছেন, যে ব্যক্তি, নেশাযুক্ত
পানীয় পান করবে, তাকে
জাহান্নামে তিনাতুল
খাবাল
পান করানো হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস
করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! ‘তিনাতুল
খাবাল' কি? তিনি বললেন
জাহান্নামীদের ঘাম।” (মুসলিম)
জাহান্নামীদেরকে
আরামদায়ক
জাহান্নামীদেরকে
আরামদায়ক ও পান উপযোগী
কোনো পানীয় দেয়া হবে না
অর্থ:
“সেখানে তারা কোনো স্নিগ্ধ
(বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না।
আর কোনো পানীয়ও পাবে
না। ফুটন্ত পানি ও প্রবাহিত
পুঁজ ব্যতীত, এটাই (তাদের) সমুচিত প্রতিফল।” (সূরা নাবা ২৪-২৬)
জাহান্নামে
জাহান্নামীদের জন্য মিঠা পানির
এক ফোটা এবং সু
স্বাদু খাবারের এক লোকমাও জাহান্নামীদের
জন্য হারাম হবে:
অর্থ:
আর আগুনের অধিবাসীরা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমাদের
উপর কিছু পানি অথবা
তোমাদেরকে আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন,
তা ঢেলে দাও'।
তারা বলবে, 'নিশ্চয় আল্লাহ তা কাফিরদের উপর
হারাম করেছেন'। (সূরা আরাফ
৫০)
জাহান্নামীদের পোশাক
(আল্লাহ
স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে
তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা
করুন, তিনি যা করেন
তা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করার মত কেউ
নেই)
জাহান্নামীদেরকে
আগুনের
পোশাক
পরানো
হবে
কোনো
কোনো অপরাধীদেরকে শৃঙ্খলিত করে আলকাতরার পোশাক
পরানো হবে
অর্থ:
“সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে
শৃঙ্খলিত অবস্থায়, তাদের জামা হবে আলকাতরার,
আর অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডলকে”। (সূরা ইবরাহিম
৪৯-৫০)
আলকাতরার পায়জামা
কোনো
কোনো অপরাধীদেরকে আলকাতরার পায়জামা এবং পাঁচড়া সৃষ্টিকারী
জামা পরানো হবে কুরআন ও
হাদীসের ইলম গোপনকারীকে আগুনের
লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে কোনো কোনো অপরাধীদেরকে আগুনের
জুতা পরানো হবে।
জাহান্নামীদের বিছানা
(আমরা
আল্লাহর উত্তম নাম ও উচ্চ
গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর নিকট আশ্রয়
চাই। তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল,
দয়ালু ও ক্ষমাশীল)
জাহান্নামীদের
ঘুমানোর জন্য আগুনের বিছানা
বিছিয়ে দেয়া হবে
অর্থ:
“জাহান্নামে তাদের জন্য থাকবে আগুনের
শয্যা, আর তাদের ওপরের
আচ্ছাদনও হবে আগুনের, এমনিভাবেই
আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” (সূরা আরাফ ৪১)
জাহান্নামীদের গালিচাও
হবে
আগুনের
জাহান্নামীদের চাদর
ও
বিছানা
সবই
আগুনের
হবে
অর্থ:
যেদিন আজাব তাদেরকে তাদের
উপর থেকে ও তাদের
পায়ের নীচে থেকে আচ্ছন্ন
করে ফেলবে এবং তিনি বলবেন,
‘তোমরা যা করতে, তার
স্বাদ আস্বাদন কর'। (সূরা
আনকাবুত ৫৫)
অর্থ:
যদি তারা পানি চায়,
তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি
যা গলিত ধাতুর মত,
যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী
নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ
বিশ্রামস্থল! (সূরা কাহাফ ২৯)
জাহান্নামীদের ছাতি
ও
বেষ্টনী
(আল্লাহ
স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে
তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা
করুন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।)
জাহান্নামীদের
উপর আগুনের ছাতি থাকবে: আগুনের
তাবুসমূহে জাহান্নামীদের বাসস্থান হবে:
জাহান্নামের আজাব
জাহান্নামের
বেষ্টনী সমূহের দু'দেয়ালের মাঝে
চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব হবে:
কুরআনের আলোকে
জাহান্নামীরা
কিয়ামতের
প্রতি অবিশ্বাসী ভদ্র লোকদের ব্যাপারে
কুরআনের ভাষ্য:
রাসূল
সাঃ কে যাদুকর বলে ইসলামের দাওয়াত
কে অবমাননা কারীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে একটি
খোঁচা মূলক প্রশ্ন করে
বলা হবে” এ আগুন
কি যাদু না তারা
দেখতে পাচ্ছে না”
জাহান্নামের আগুনের
দিকে
নেওয়া
হবে
অর্থঃ
সেদিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে
যাওয়া হবে। ‘এটি সেই জাহান্নাম
যা তোমরা অস্বীকার করতে।' ‘এটি কি যাদু,
নাকি তোমরা দেখতে পাচ্ছ না!' তোমরা আগুনে
প্রবেশ কর, তারপর তোমরা
“তোমরা এর উত্তাপ ভোগ
কর”।
ধৈর্যধারণ
কর বা না কর,
উভয়ই তোমাদের জন্য সমান; তোমাদেরকে
তো কেবল তোমাদের আমলের
প্রতিফল দেয়া হচ্ছে। (সূরা তূর ১৩-১৬)
দুনিয়াতে এ
আজাব
দ্রুত
আসুক
কাফিরদেরকে
জাহান্নামে উত্তপ্ত করতে করতে জাহান্নামের
পাহারাদার বলবে, দুনিয়াতে এ আজাব দ্রুত
আসুক তা কামনা করতে
এখন খুব মজা করে
তা গ্রহণ কর
অর্থ:
“অভিশপ্ত হোক মিথ্যাচারীরা, যারা
অজ্ঞ ও উদাসীন! তারা
জিজ্ঞেস করে কর্মফল দিবস
কবে হবে? (বল) সেদিন যেদিন
তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে অগ্নিতে। (এবং
বলা হবে) তোমরা তোমাদের
শাস্তি আস্বাদন কর তোমরা এ
শাস্তিই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে।” (সূরা
যারিয়াত ১০-১৪)
জাহান্নামের পাহারাদার
ফেরেশতা
জাহান্নামে
প্রবেশকারী কাফিরদেরকে জাহান্নামের পাহারাদার ফেরেশতা এক বিদ্রুপাত্মক প্রশ্ন
করে বলবে: আপনারা তো খুব অনুগত
লোক ছিলেন:
অর্থ:
“(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) ‘একত্র
কর যালিম ও তাদের সঙ্গী
সাথীদেরকে এবং যাদের ইবাদাত
তারা করত তাদেরকে। ‘আল্লাহকে
বাদ দিয়ে, আর তাদেরকে আগুনের
পথে নিয়ে যাও’।
‘আর
তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে'। ‘তোমাদের কী
হলো, তোমরা একে অপরকে সাহায্য
করছ না?' বরং তারা
হবে আজ আত্মসমর্পণকারী। (সূরা
সাফ্ফাত ২২-২৬)
আজকে এই পর্যন্তই। নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন।
পোস্ট ট্যাগঃ