বদর যুদ্ধ আসল ঘটনা (battle belt)
বদর যুদ্ধ (battle belt) আসল ঘটনা
বদর হুনায়ন পূর্ণ নাম। এটা হল সৌদি আরবের
আল মদিনা প্রদেশের একটি শহর। এই
শহর মদিনা থেকে ৮০ মাইল
দূরে উত্তর -পূর্বে অবস্থিত।
ইসলামের ইতিহাসে বদর যুদ্ধ (battle belt badr) খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মুসলমান আর অবিশ্বাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম সামরিক সংঘর্ষ বা যুদ্ধের নাম বদর যুদ্ধ। মক্কার কুরাইশ ও হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) মধ্যে ৬২৪ খ্রিঃ দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনার অদূরে বদর নামক প্রান্তরে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এতে
মহানবী (সঃ) ও মুসলিম
বাহিনী অভাবনীয়ভাবে বিজয়লাভ করে এবং কুরাইশ
বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। এ
যুদ্ধের ফলে প্রমাণিত হয়
ইসলাম হল সত্য এবং
অজেয়। আর মক্কার মুশরিকরা
যে ভ্রান্ত তা প্রমাণিত হয়।
বদর যুদ্ধের (battle belt badr) কারণ ও ফলাফল
বদর যুদ্ধের
প্রধান
কারণসমূহ
নিম্নরূপঃ
১. ইসলামের
অগ্রযাত্রায়
কুরাইশদের
জ্বালাতন
হিজরতের
পর মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এ ক্রমবর্ধিষ্ণু
ক্ষমতা ও ইসলামের অগ্রযাত্রায়
কুরাইশদের মনে ঈর্ষা ও
শত্রুতার উদ্রেক হয়। তারা উদীয়মান
এ রাষ্ট্র এবং এর মহান
নায়ককে ধ্বংস করার শপথ করে।
বদরের যুদ্ধ এরই ফলশ্রুতি।
২. মদিনাবাসীদের
উপর
কুরাইশদের
আক্রোশঃ
হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর সাথীদের
মদিনাতে আশ্রয় দেয়ার কারণে মদিনাবাসীদের ওপর কুরাইশরা ক্ষেপে
যায়। জন্মভুমি মক্কা হতে হযরতকে বিতাড়িত
করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি।
তাঁকে এবং নব প্রতিষ্ঠিত
ইসলামি রাষ্ট্রকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য তাঁরা
ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধের প্রস্তুতি
গ্রহণ করতে থাকে।
৩. মুনাফিক
আব্দুল্লাহ
বিন
উবাইর
এর ষড়যন্ত্রঃ
মহানবীর
(সঃ) এর নেতৃত্ব খর্ব
করার জন্য মুনাফিক নেতা
আব্দুল্লাহ বিন উবাইর গোপনে কুরাইশদের
সাথে ষড়যন্ত্র করে। কারণ, তার
মদিনার শাসক হবার আকাংখা
ছিল। কিন্তু নবীর আগমনে তা
সম্ভব হয়নি।
৪. মুনাফিকদের
ষড়যন্ত্রঃ
মুনাফিক
শ্রেণী ইহুদীদের সাথে গোপন ষড়যন্ত্র
করে এবং মহানবী (সঃ)
তথা ইসলামের ধ্বংস সাধনের জন্য কুরাইশদের সাথে
গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
৫. ইহুদীদের
ষড়যন্ত্রঃ
মদিনায়
হযরত (সঃ)-এর ক্রমবর্ধমান
প্রতিপত্তি ইহুদীগণ সহ্য করতে পারেনি।
মদিনা সনদের কথা ভুলে গিয়ে
ধর্মীয় এবং নাগরিক স্বাধীনতা
সত্ত্বেও তারা মহানবীর (সঃ)
বিনাশ সাধনে তৎপর হয়ে ওঠে।
তারা মদিনায় মুসলমানদের গোপন সংবাদসমূহ মক্কার
কাফিরদের কাছে সরবরাহ করে
মদিনা আক্রমণের জন্য প্ররোচিত করতে
থাকে।
৬. মদিনা
সনদের
শর্তভঙ্গঃ
মুনাফিক
গোষ্ঠী ও বিশ্বাসঘাতক ইহুদীরা
মদিনা সনদের চুক্তির বরখেলাপ করে গোপনে সারা
মদিনায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে
রেখেছিল। তারা মহানবীর (সঃ)
মহানুভবতা ও উদারতার সুযোগে
নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তৎপর হয়ে
উঠে।
৭. অর্থনৈতিক
কারণঃ
নির্বিঘ্নে
ব্যবসায় বাণিজ্য করার সুযোগ হারাতে
পারে এ আশংকায় কুরাইশরা
যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ব্যবসায়
ও তীর্থযাত্রা বন্ধ হলে কুরাইশগণ
আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভেবে ইসলামের
মূলোৎপাটনে বাণিজ্যের অজুহাতে এক কাফেলা নিয়ে
সিরিয়া যায়।
সেখান
থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দিনার মূল্যের ধন-রত্ন এবং
বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে দেশে
প্রত্যাবর্তন করার পথে মুসলমানদের
আক্রমণের ভয়ে মক্কায় সাহায্য
চেয়ে পাঠায়। আবু জেহেল এক
হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণের
জন্য রওয়ানা হয়।
৯. দস্যুবৃত্তি
ও
লুটতরাজঃ
মক্কার
বাণিজ্য পথে বসবাসকারী বিভিন্ন
আরব গোত্র কুরাইশদের পক্ষে কাজ করত এবং
মহানবীর (সঃ) বিরোধিতা করত।
মদিনার সীমান্তবর্তী এলাকায় কুরাইশগণ ও তাদের সাহায্যকারী
আরব গোত্র মুসলমানদের শস্যক্ষেত, ফলবান গাছপালা, উট, ছাগল লুট
করে নিত এবং জ্বালিয়ে
দিত, ধ্বংস করত এবং অপহরণ
করত। সুতরাং মহানবী (সঃ)-এ থেকে
বেঁচে থাকার জন্য আত্মরক্ষার ব্যবস্থা
করতে বাধ্য হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি
গ্রহণ করেন।
১০. নাখলার
খণ্ডযুদ্ধঃ
কুরাইশদের
ক্রমবর্ধমান লুটতরাজ ও অত্যাচার বন্ধ
করার জন্য মহানবী (সঃ)
আব্দুল্লাহ ইবন জাহাশের নেতৃত্বে
১২ জনের একটি টহলদার
বাহিনী মক্কায় প্রেরণ করেন। হযরতের নির্দেশ ছিল শত্রুদের গতিবিধি
লক্ষ রাখা। কিন্তু সেখানে কুরাইশ দলের সাথে তাদের
খণ্ড যুদ্ধ বাঁধে। এই নাখলার
খণ্ডযুদ্ধকে
বদর যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ
বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।
১১. ইসলাম
ও
মহানবী
(সঃ)-কে
নির্মূলের
বাসনাঃ
মক্কার
কুরাইশরা ইসলাম ও তার মহান
নায়ক মুহাম্মদ (সাঃ) কে নির্মূলের বাসনা
পোষণ করত অহর্নিশ। ইসলামের
অনির্বাণ দ্বীপ শিখাকে এক ফুঁৎকারে নিভিয়ে
দেয়ার মানসেই তারা মদিনা আক্রমণ
করতে অগ্রসর হয়। আর মহানবী
(সঃ) আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত হলে
চূড়ান্ত সংঘর্ষ বাঁধে।
১২. ওহীর
নির্দেশঃ
মক্কার
কুরাইশদের সমরাভিযানে হযরত (সঃ) যখন খুবই
বিচলিত; এমন অবস্থায় মহান
আল্লাহ তাআলা মহানবীর (সঃ) কাছে প্রত্যাদেশ
পাঠিয়ে নির্দেশ দেন- ‘আল্লাহর পথে তাদের সাথে
যুদ্ধ কর, যারা তোমার
সাথে যুদ্ধ করে। তবে সীমালংঘন
করো না' (আল কুরআন-১৯০)
আড়ও পড়ুনঃ ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস
বদরের যুদ্ধ (battle belt badr) ঘটনাঃ
কুরাইশদের
যুদ্ধাভিযানের সংবাদ পেয়ে হযরত মুহাম্মদ
(সঃ) খুবই বিচলিত হয়ে
পড়লেন। এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে
অনুপ্রাণিত হলেন। “আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে
যুদ্ধ কর, যারা তোমাদের
সঙ্গে যুদ্ধ করে। তবে সীমা
লঙ্ঘন করো না, কারণ
আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীগণকে পছন্দ করেন না।''
বদর যুদ্ধ
কত
সালে
হয়
যুদ্ধ
সংক্রান্ত মন্ত্রণাসভার পরামর্শক্রমে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ (১৭ রমযান ২য় হিজরি) ২৫৩ জন আনসার এবং ৬০ জন মুহাজির নিয়ে গঠিত একটি
মুসলিম বাহিনীসহ কুরাইশ বাহিনীর মোকাবেলার জন্য হযরত মুহাম্মদ
(সঃ) বের হলেন।
বদর যুদ্ধের
ইতিহাস
মদিনা হতে
৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে
বদর উপত্যকায়
মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে বিধর্মী কুরাইশদের সংঘর্ষ হয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ)
স্বয়ং যুদ্ধ পরিচালনা করে অনুপ্রেরণা দান
করেন। আল-আরিসা পাহাড়ের
পাদদেশে মুসলিম বাহিনীর শিবির স্থাপিত হল এবং এর
ফলে পানির কুপগুলো তাঁদের আয়ত্তে ছিল।
ওয়ালিদ ইবনে উতবার
সঙ্গে
মল্ল
যুদ্ধ
মহানবীর
(সঃ) নির্দেশে যথাক্রমে হযরত আমীর হামযা,
আলী ও আবু উবায়দা
(রাঃ), কুরাইশ পক্ষের নেতা উতবা, শাইবা
এবং ওয়ালিদ ইবনে উতবার সঙ্গে মল্ল যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এতে শত্রুপক্ষীয়
নেতৃবৃন্দ শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত হন।
আবু জেহেল
বিধর্মী
বাহিনীসহ
উপায়ান্তর
না দেখে আবু জেহেল
বিধর্মী বাহিনীসহ মুসলিম বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
তারা মুসলমানদের উপর প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ করতে লাগল,
কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা এবং সংঘবদ্ধ ও
সুশৃংখল মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করা কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব
হয়নি।
বদর যুদ্ধে অভূতপূর্ব
বিজয়
লাভ
অসামান্য
রণনৈপুণ্য, অপূর্ব বিক্রম ও অপরিসীম নিয়মানুবর্তিতার
সঙ্গে যুদ্ধ করে মুসলমানগণ বদর
যুদ্ধে অভূতপূর্ব
বিজয় লাভ করেন। এ যুদ্ধে ৭০
জন
কুরাইশ
সৈন্য
নিহত
হয়,
সমসংখ্যক সৈন্য বন্দী হয়। অপর দিকে মাত্র ১৪
জন
মুসলিম
সৈন্য
শাহাদত
বরণ
করেন। আবু
জেহেল
এ
যুদ্ধে
নিহত
হয়।
বদর যুদ্ধের (battle belt badr) ইতিহাস pdf download
নিচের
লিংক থেকে এক ক্লিকেই বদর যুদ্ধের ইতিহাসের pdf download করতে পারবেন।
http://www.ebookbou.edu.bd/Books/Text/OS/HSC/hsc_1856/Unit-04.pdf
বদর যুদ্ধ (battle belt badr) উপসংহার
হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমযান বিশ্বের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিনে হযরত মুহাম্মদ (স) মাত্র ৩১৩ জনের মুসলিম বাহিনী নিয়ে মদিনার ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক মাঠে আবু জেহেলের সুসজ্জিত এক হাজার দুর্ধর্ষ কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে মরণ-পণ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
আল্লাহর অসীম
করুণায় মুসলমানগণ জয়ী হন। ৭০
জন কুরাইশ নিহত ও ৭০
জন বন্দী হয়। মুসলমানদের মাত্র
১৪ জন শাহাদাত বরণ
করেন।
পোস্ট ট্যাগঃ