জাহান্নামের আগুন ও খাবার কি
জাহান্নামের আগুন ও খাবার কি?
জাহান্নাম
আরবি শব্দের বাংলা অর্থ হলো গর্ত বা শাস্তির স্থান। এখানে আল্লাহপাক তার পাপী বান্দাদের
নিক্ষেপ করবেন। আজকের পোস্টে আমরা জাহান্নামের খাবার কি? জাহান্নামের আগুন, জাহান্নামের
খাবারের প্রকারভেদ কি? জাহান্নামের পুজ রক্ত কখন দেওয়া হবে জাহান্নামের খাবার কখন দেওয়া
হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
জান্নাতীদের খাবার
আরবির
অর্থঃ মুত্তাকীদেরকে
যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো,
তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত
হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সূরার
নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত
মধুর ঝর্ণাধারা।
জাহান্নামের খাবার
তথায়
তাদের জন্য থাকবে সব
ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের
পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা
কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী
হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত
পানি পান করানো হবে
ফলে তা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? (সূরা
মুহাম্মদ ১৫)
ক্ষত স্থান
থেকে
নির্গত
পুঁজ
ও
রক্ত
জাহান্নামীদের
ক্ষত স্থান থেকে নির্গত রক্ত
ও পুঁজ বা ফুটন্ত
পানি ও জাহান্নামীদেরকে পান
করার জন্য দেয়া হবে
যা তারা অতি কষ্টে
গলধঃকরণ করবে
আরবির
অর্থঃ: এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান
করানো হবে গলিত পুঁজ
থেকে। সে তা গিলতে
চাইবে এবং প্রায় সহজে
সে তা গিলতে পারবে
না। আর তার কাছে
সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেয়ে
আসবে, অথচ সে মরবে
না। আর এর পরেও
রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা
ইবরাহীম ১৬-১৭)
তৈলাক্ত গরম
পানীয়
তৈলাক্ত
ফুটন্ত গাঢ় দুর্গন্ধময় পানীয়
জাহান্নামীদেরকে পান করার জন্য
দেয়া হবে
গরম
তৈলাক্ত পানীয় জাহান্নামীর মুখে দেয়া মাত্রই
তাদের চেহারা বিদগ্ধ হয়ে যাবে
কাল বিষাক্ত
দুর্গন্ধময়
পানীয়
উল্লেখিত
৩টি পানীয় ব্যতীত অত্যধিক কাল বিষাক্ত দুৰ্গন্ধ
ময় পদার্থও জাহান্নামীদেরকে পানীয় হিসেবে দেয়া হবে
هَذَا وَإِنَّ لِلطَّاغِيْنَ لَشَرَّ
مَابٍ جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ هَذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَاقٌ
وَآخَرُ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجُ
জাহান্নামের আগুন কেমন হবে
আরবির
অর্থঃ এমনই, আর নিশ্চয় সীমালংঘনকারীদের
জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম নিবাস। জাহান্নাম, তারা সেখানে অগ্নিদগ্ধ
হবে। কতই না নিকৃষ্ট
সে নিবাস! এমনই, সুতরাং তারা এটি আস্বাদন
করুক, ফুটন্ত পানি ও পুঁজ।
আরও রয়েছে এ জাতীয় বহুরকম
আযাব। (সূরা সোয়াদ ৫৫-৫৮)
গাসসাক
পানীয় এত বিষাক্ত ও
দুর্গন্ধময় যে এর এক
বালতি সমগ্র পৃথিবীতে দুর্গন্ধময় করার জন্য যথেষ্ট
হবে
জাহান্নামের খাবারের প্রকারভেদ
জাহান্নামীদের ঘাম
পৃথিবীতে
নেশা ও মদপান কারীদেরকে
আল্লাহ জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত
গাঢ় দুর্গন্ধময় বিষাক্ত ঘাম পান করাবেন:
সাহাবাগণ
জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ!
‘তিনাতুল খাবাল' কি? তিনি বললেন
জাহান্নামীদের ঘাম।” (মুসলিম)
জাহান্নামীদেরকে
আরামদায়ক ও পান উপযোগী
কোনো পানীয় দেয়া হবে না
لا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْداً وَلا
شَرَاباً إِلأَحَمِيماً وَغَشَاقَ جَزَاءً وِفَاقاً
আরবির
অর্থঃ “সেখানে তারা কোনো স্নিগ্ধ
(বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না।
আর কোনো পানীয়ও পাবে
না। ফুটন্ত পানি ও প্রবাহিত
পুঁজ ব্যতীত, এটাই (তাদের) সমুচিত প্রতিফল।” (সূরা নাবা ২৪-২৬)
জাহান্নামীদের জন্য
মিঠা
পানির
এক
ফোটা
জাহান্নামে
জাহান্নামীদের জন্য মিঠা পানির
এক ফোটা এবং সু
স্বাদু খাবারের এক লোকমাও জাহান্নামীদের
জন্য হারাম হবে
জাহান্নামীদের পোশাক
আল্লাহ
স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে
তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা
করুন, তিনি যা করেন
তা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করার মত কেউ
নেই।
জাহান্নামীদেরকে
আগুনের
পোশাক
পরানো
হবে
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي
رَبِّهِمْ فَالَّذِيْنَ كَفَرُوا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّنْ
نَّارِ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ
الْحَمِيمُ يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ
আরবির
অর্থঃ এরা দু'টি বিবাদমান
পক্ষ, যারা তাদের রব
সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা
কুফরী করে তাদের জন্য
আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের
মাথার উপর থেকে ঢেলে
দেয়া হবে ফুটন্ত পানি।
যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যাকিছু রয়েছে তা ও তাদের
চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। (সূরা
হাজ্জ ১৯-২০)
কোনো
কোনো অপরাধীদেরকে শৃঙ্খলিত করে আলকাতরার পোশাক
পরানো হবে
জাহান্নামের আজাব
কোনো
কোনো অপরাধীদেরকে আলকাতরার পায়জামা এবং পাঁচড়া সৃষ্টিকারী
জামা পরানো হবে: কুরআন ও
হাদীসের ইলম গোপনকারীকে আগুনের
লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে
কোনো
কোনো অপরাধীদেরকে আগুনের জুতা পরানো হবে
জাহান্নামীদের বিছানা
(আমরা
আল্লাহর উত্তম নাম ও উচ্চ
গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর নিকট আশ্রয়
চাই। তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল,
দয়ালু ও ক্ষমাশীল)
জাহান্নামীদের ঘুমানোর
জন্য
আগুনের
বিছানা
বিছিয়ে
দেয়া
হবে
لَهُمْ مِّنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ
فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ
আরবির
অর্থঃ: “জাহান্নামে
তাদের জন্য থাকবে আগুনের
শয্যা, আর তাদের ওপরের
আচ্ছাদনও হবে আগুনের, এমনিভাবেই
আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” (সূরা আরাফ ৪১)
জাহান্নামীদের গালিচাও
হবে
আগুনের
জাহান্নামীদের
চাদর ও বিছানা সবই
আগুনের হবে
আরবির
অর্থঃ যদি তারা পানি চায়,
তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি
যা গলিত ধাতুর মত,
যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী
নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ
বিশ্রামস্থল ! (সূরা কাহাফ ২৯)
জাহান্নামীদের ছাতি
ও
বেষ্টনী
জাহান্নামীদের
উপর আগুনের ছাতি থাকবে
আগুনের
তাবুসমূহে জাহান্নামীদের বাসস্থান হবে। জাহান্নামের বেষ্টনী
সমূহের দু'দেয়ালের মাঝে
চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব হবে:
কুরআনের আলোকে
জাহান্নামীরা
কিয়ামতের
প্রতি অবিশ্বাসী ভদ্র লোকদের ব্যাপারে
কুরআনের ভাষ্য:
خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاءِ
الْجَحِيمِ ثُمَّ صُبُوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ
ذُقُ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ
إِنَّ هَذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ
রাসূল
সাঃ কে যাদুকর বলে ইসলামের দাওয়াত
কে অবমাননা কারীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে একটি
খোঁচা মূলক প্রশ্ন করে
বলা হবে” এ আগুন
কি যাদু না তারা
দেখতে পাচ্ছে না”
يَوْمَ يُدَعُونَ إِلَى نَارِ جَهَنَّمَ
دَعَا هَذِهِ النَّارُ الَّتِي كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ أَفَسِحْرٌ هَذَا أَمْ أَنتُمْ
لاَ تُبْصِرُونَ إِصْلَوْهَا فَاصْبِرُوا أَوْ لَا تَصْبِرُوا سَوَاءٌ
عَلَيْكُمْ إِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا
كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ
জাহান্নামের আগুনের
দিকে
হাঁকিয়ে
নিয়ে
আরবির
অর্থঃ সেদিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে
যাওয়া হবে। ‘এটি সেই জাহান্নাম
যা তোমরা অস্বীকার করতে।' ‘এটি কি যাদু,
নাকি তোমরা দেখতে পাচ্ছ না!' তোমরা আগুনে
প্রবেশ কর, তারপর “তোমরা
এর উত্তাপ ভোগ কর”।
জাহান্নামের খাবারের উপসংহার
জাহান্নামের
খাবার কি ভয়াবহ তার সময় কখন, তা জানা গেল। জাহান্নামে দেওয়া হবে পুজ, রক্ত ঘৃণিত ঘাম,
যা খাওয়ার সাথে সাথে আমাদের নারীভুড়ি বেড়িয়ে আসবে। মহান আল্লাহপাক আমাদের যেনো জান্নাতুল
ফেরদৌস দান করেন আমিন।
পোস্ট ট্যাগঃ