জাহান্নামের স্তর কয়টি
জাহান্নামের
স্তর মোট ৭টি। মানুষ যখন জাহান্নামি ঘোষিত হয়ে যাবে তখন নিচের যে কোনো একটিতে নিক্ষেপিত
হবে। জাহান্নাম হতে বাচতে হলে আমাদেরকে আল্লাহর শিরকমুক্ত ইবাদত করতে হবে। তাহলে মহান
আল্লাহপাক আমাদেরকে জাহান্নাম হতে বাচিয়ে মহা সুখের জান্নাত দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
জাহান্নামের স্তর
৭টি
জাহীম (hells)
হুতামা (hells)
হাবিয়া (hells)
সাকার (hells)
লাযা (hells)
সাঈর (hells)
যামহারীর (hells)
ওয়াইল (hells)
জাহান্নামের স্তর গুলো
জানার পর এখন জানবো যে, জাহান্নামের ভয়ংকর আজাবসমূহ কি কি? জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির
দোয়া, জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষার উপায় কি ইত্যাদি।
আরবির বাংলা অর্থ:
“হাজ্জাজ সাঈদ বিন যুবাইর
(রাঃ)-কে আশ্চর্য হয়ে
জিজ্ঞেস করল, আমি শুনেছি
যে তুমি নাকি কখনো
হাসনা! যুবাইর (রাঃ) বললেন: আমি
কি করে হাসব অথচ
জাহান্নামকে উদ্দীপিত করা হয়েছে, লোহার
বেড়ী প্রস্তুত করা হয়েছে, জাহান্নামের
ফেরেশতারা প্রস্তুত হয়ে আছে।”
কোনো মু'মিন পুলসিরাত পার হওয়ার আগে নির্ভয় হতে পারবে না:
আরবির বাংলা অর্থ:
“মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: মু'মিন ব্যক্তি পুলসিরাত
অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত
নির্ভয় হতে পারবে না।”
জাহান্নাম ও
পূর্বসূরীগণ
ওমর
বিন আবদুল আযীয (রাঃ) জাহান্নামের বেড়ী
ও জিঞ্জীর সংক্রান্ত আয়াতটি বার বার তেলাওয়াত
করে করে রাত ভর
কাঁদতেন
জাহান্নাম আজাব
আরবির বাংলা অর্থ:
“ওমার বিন আবদুল আযীয
(রাঃ) একদা তাহাজ্জুদ নামায
পড়তেছিলেন, যখন তিনি এ
আয়াত “যখন তাদের গলদেশে
বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে
তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া
হবে। ফুটন্ত পানিতে, এরপর তাদেরকে দগ্ধ
করা হবে অগ্নিতে। (সূরা
মু'মিন ৭১-৭২)
রাবী'
বিন খাইসাম (রাঃ) চুলার আগুন
দেখে বেহুশ হয়ে যেতেন:
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবু ওয়ায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেছেন: আমরা আবদুল্লাহ বিন
মাসউদ (রাঃ)-এর সাথে
একদা বাহিরে বের হলাম, আমাদের
সাথে রাবি' বিন খাইসামও ছিল,
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ফুরাত
নদীর তীরে একটি চুলার
পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যখন সেখানে দেখলেন
যে আগুন প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে
তখন তিনি এ আয়াত
তেলাওয়াত করতে লাগলেন,
“যখন
জাহান্নাম কাফিরদেরকে দূর থেকে দেখবে,
তখন তারা তার ক্রুব্ধ
গর্জন ও চিৎকার শুনতে
পাবে।” এ কথা শুনে
রাবি বিন খাইসাম বেহুশ
হয়ে পড়ে গেল, লোকেরা
তাকে খাটে উঠিয়ে বাড়িতে
নিয়ে আসল। আবদুল্লাহ বিন
মাসউদ তার নিকট সকাল
থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে বসে তার
হুশ ফিরানোর চেষ্টা করল কিন্তু তার
হুশ ফিরল না
জাহান্নাম সম্পর্কে
সতর্ক
করা
সমস্ত
দুনিয়াকে জাহান্নাম
সম্পর্কে
সতর্ক
করার
আগ্রহ:
আরবির বাংলা অর্থ:
“মালেক বিন দিনার (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি
আমার পক্ষে সম্ভব হত যে আমি
না ঘুমিয়ে থাকব, তবে আমি তা
করতাম, আর তা এ
আশঙ্কায় যে, কখনো ঘুমন্ত
অবস্থায় যেন আল্লাহর আযাব
আমার ওপর পতিত না
হয়। যদি আমার নিকট
সাহায্যকারী থাকত, তাহলে আমি তাদেরকে সারা
দুনিয়ায় পাঠাতাম যে, তারা যেন
এ আহ্বান করে যে, হে
লোকেরা! জাহান্নাম থেকে সতর্ক হও।
হে লোকেরা! জাহান্নাম থেকে সতর্ক হও।”
সুফিয়ান
সাওরী পরকালের স্মরণে এত সন্ত্রস্ত হতেন
যে তাতে তার রক্ত
পেসাব শুরু হত:
আরবির বাংলা অর্থ:
“মূসা বিন মাসউদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন
আমরা সুফিয়ান সাওরীর (রাঃ) নিকট বসতাম,
তখন তাকে ভীত সন্ত্রস্ত
দেখে আমাদের মনে হত যেন
আগুন আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আর
তিনি যখন পরকালের কথা
স্মরণ করতেন তখন তার রক্ত
পেসাব শুরু হত।"
মৃত্যু, কবর,
কিয়ামত,
পুলসিরাতের
ভয়
আরবির বাংলা অর্থ:
“আতা আসসুলামী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করা হলো এ কিসের
চিন্তা? তিনি বললেন: তোমার
ধ্বংস হোক, (তুমি কি জান
না) মৃত্যু আমার গর্দানে, কবর
আমার ঠিকানা, কিয়ামতের দিন আমাকে আল্লাহর
আদালতে দাঁড়াতে হবে। আর জাহান্নামের
ওপর স্থাপিত পুলসিরাতের ওপর দিয়ে আমাকে
অতিক্রম করতে হবে। আর
আমি জানিনা যে, শেষ পর্যন্ত
আমার কি হবে।
জাহান্নামের কথা
স্মরণ
হওয়ায়
আবু
মাইসূরা
(রাঃ)
বলেন:
আফসোস!
আমার
মা
যদি
আমাকে
প্রসব
না
করত
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবু মাইসারা (রঃ) যখন বিছানায়
শুইতে যেতেন তখন বলতেন হায়!
আফসোস আমার মা যদি আমাকে প্রসব না করত, আর কাঁদতে শুরু করতেন, তাকে জিজ্ঞেস করা
হলো হে আবু মাইসারা
কেন কাঁদছেন? তিনি বললেন: আমার
একথা জানা আছে যে,
আমাকে
জাহান্নামের
ওপর
দিয়ে
অতিক্রম
করতে
হবে,
কিন্তু
জানা
নেই
যে,
আমার
মুক্তি
হবে
কিনা।”
জাহান্নামের স্মরণে
জীবনের
তরে
হাসি
বন্ধ
আরবির বাংলা অর্থ:
“হাসান বসরী (রঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেছেন: এক সৎলোক তার
ভাইকে জিজ্ঞেস করল, তোমার কি
জানা আছে যে, তোমাকে
জাহান্নামের ওপর দিয়ে অতিক্রম
করতে হবে? সে বলল:
হ্যাঁ। সে আবার জিজ্ঞেস
করল তোমার কি একথা জানা
আছে যে, তুমি সেখান
থেকে মুক্তি পাবে? সে বলল: না।
তখন ঐ সৎলোকটি বলল:
তাহলে এ কিসের হাসি?
এর পর থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি আর
হাসে নি।”
কিয়ামতের দিন
কঠিন
পিপাসার
ভয়ে
বুদাইল
বিন মাইসারা (রাঃ) কিয়ামতের দিন
কঠিন পিপাসার ভয়ে এত কাঁদলেন
যে, তার রক্ত অশ্রু
প্রবাহিত হতে লাগল:
আরবির বাংলা অর্থ:
“বুদাইল বিন মাইসারা এত
কাঁদত যে, চোখ দিয়ে
বমি ও রক্ত প্রবাহিত
হতে শুরু করত। সব
সময় পরকালের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত
থাকত, আর বলত যে,
আমি কিয়ামতের দিন কঠিন পিপাসার
ভয়ে কাঁদছি।”
জাহান্নামের ভয়ে
যখন
কাঁদত
মুহাম্মদ
বিন মুনকাদের জাহান্নামের ভয়ে যখন কাঁদত
তখন চোখের পানি দিয়ে চেহারা
ও দাড়ি ভিজিয়ে দিত
আরবির বাংলা অর্থ:
“মুহাম্মদ বিন মুনকাদির (রঃ)
যখন কাঁদতেন তখন চোখের পানি
দিয়ে স্বীয় চেহারা ও দাড়ি মুছে
নিতেন, আর বলতেন: আমি
শুনেছি (আল্লাহর ভয়ে) প্রবাহিত চোখের পানি যেখানে পৌঁছবে
ঐ স্থান জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে
না।”
আতা
আস সুলামী (রাঃ) তার প্রতিবেশীদের
চুলার আগুন দেখে বেহুশ
হয়ে গিয়েছিল:
আরবির বাংলা অর্থ:
“আলা বিন মোহাম্মদ একদা
আতা আসসুলাইমী (রঃ)-এর নিকট
এসে দেখলেন যে তিনি বেহুশ
হয়ে আছেন, তখন তিনি তার
স্ত্রী উম্মে জা'ফরকে জিজ্ঞেস
করলেন, আতা আসসুলাইমীর কি
হয়েছে? স্ত্রী বলল: আমাদের প্রতিবেশীরা
চুলা জ্বালাচ্ছিল আর তা দেখে
তিনি বেহুশ হয়ে গেছেন।”
জাহান্নামের ভয়ে
হাসান
বসরী
(রঃ)-এর
ক্রন্দন
আরবির বাংলা অর্থ:
“হাসান বাসরী (রঃ)-কে কাঁদতে
দেখে জিজ্ঞেস করা হলো যে,
কে তোমাকে কাঁদাচ্ছে? সে বলল: আমার
ভয় হয় না জানি
কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন। আল্লাহ তো কোনো কিছুর
পরওয়া করেন না ৷'
ইয়াযিদ বিন
হারুন
(রঃ)-এর
উভয়
চোখ
কেঁদে
কেঁদে
অন্ধ
হয়ে
গিয়েছিল
আরবির বাংলা অর্থ:
“হাসান বিন আরাফা (রঃ)
বলেছেন: আমি ইয়াযিদ বিন
হারুন (রঃ)-কে দেখেছি
যে, তার চোখ দু'টি খুব সুন্দর
ছিল, কিছুদিন পর দেখলাম যে
তার শুধু একটি চোখ,
আরো কিছু দিন পর
দেখলাম যে, তার দু'টি চোখই নষ্ট
হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
হে আবু খালেদ! তোমার
সুন্দর দু'টি চোখ
কি হলো? সে বলল:
কান্নাবিজড়িত রাত্রি জাগরণে তা নষ্ট হয়ে
গেছে।"
মৃত্যুর পূর্বে
ঈমান
নষ্ট
হয়ে
যাওয়ার
ভয়
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবদুর রহমান বিন মাহদী (রঃ)
বলেন, সুফিয়ান (রঃ) আমার নিকট
রাত্রি যাপন করল, যখন
তার ক্লান্তি এসে গেল তখন
সে কাঁদতে লাগল। এক ব্যক্তি তাকে
জিজ্ঞেস করল হে আবু
আবদুল্লাহ! তুমি কি অধিক
গুনাহর কারণে কাঁদতেছ? তখন সে মাটি
থেকে একটি কিছু উঠিয়ে
বলল: আল্লাহর কসম!
গুনাহর
বিষয়টি আমার নিকট এ
তুচ্ছ জিনিসটি থেকেও হালকা মনে হয়। কিন্তু
আমার ভয় হয় না
জানি মৃত্যুর পূর্বে আমার ঈমান ছিনিয়ে
নেয়া হয়।”
এশার নামাযের
পর
থেকে
ঘুম
আসা
পর্যন্ত
আল্লাহর
ভয়ে
ওমার
বিন আবদুল আযীয এশার নামাযের
পর থেকে ঘুম আসা
পর্যন্ত আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে থাকতেন:
আরবির বাংলা অর্থ:
“ফাতেমা বিনতে আবদুল মালেক বিন মারওয়ান (রঃ)
যিনি ওমর বিন আবদুল
আযীয (রঃ)-এর স্ত্রী
ছিলেন তিনি বলেছেন যে,
লোকদের মধ্যে ওমর (রাঃ) চেয়ে
নামায রোযা অধিক পরিমাণে
করার মত তো অনেকেই
ছিল, কিন্তু আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী আমি
ওমর (রাঃ)-এর চেয়ে
অধিক আর কাউকে দেখি
নি। যখন এশার নামায
শেষ হয়ে যেত তখন
আল্লাহর নিকট হাত তুলে
কাঁদতে থাকত এবং একাধারে
ঘুম আসা পর্যন্ত কাঁদতে
থাকত। যদি উঠানো হত
তাহলে আবার হাত তুলে
কাঁদতে শুরু করত। এমন
কি ঘুম আসা পর্যন্ত
কাঁদতে থাকত ৷
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত
হবে
সে
উত্তম
বড় চিন্তার বিষয়
যে
ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে উত্তম,
না যে তা থেকে
নিরাপত্তা পাবে সে উত্তম
বাংলা অর্থ:
শ্রেষ্ট কে? যে ব্যক্তি
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, না
যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে
সে! তোমাদের যা ইচ্ছা তা
কর, তোমরা যা কর তিনি
তার দ্রষ্টা।” (সূরা হা-মীম
সেজদা ৪০)
জাহান্নামের উত্তপ্ত
আগুন
দেখে
জাহান্নামের
উত্তপ্ত আগুন দেখে মৃত্যুর
ধ্বংস কামনাকারী ব্যক্তি উত্তম না ঐ ব্যক্তি
উত্তম যে, এমন স্থানে
থাকবে যেখানে তার সমস্ত ইচ্ছা
পূরণ করা হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“বরং তারা কেয়ামতকে অস্বীকার
করে এবং যে কেয়ামতকে
অস্বীকার করে, আমি তার
জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করেছি। অগ্নি যখন দূর থেকে
তাদেরকে দেখবে, তখন তারা শুনতে
পাবে তার গর্জন ও
হুঙ্কার। যখন এক শিকলে
কয়েকজনকে বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের কোনো সংকীর্ণ স্থানে
নিক্ষেপ করা হবে, তখন
সেখানে তারা মৃতুকে ডাকবে।
বলা
হবে, আজ তোমরা এক
মৃত্যুকে ডেকো না অনেক
মৃত্যুকে ডাক। বলুন এটা
উত্তম, না চিরকাল বসবাসের
জান্নাত, যার সুসংবাদ দেয়া
হয়েছে মুত্তাকীদেরকে? সেটা হবে তাদের
প্রতিদান ও প্রত্যাবর্তন স্থান।
তারা চিরকাল বসবাসরত অবস্থায় সেখানে যা চাইবে, তাই
পাবে। এই প্রার্থিত ওয়াদা
পূরণ আপনার পালনকর্তার দায়িত্ব। (সূরা ফুরকান ১১-১৬)
যাক্কুম বৃক্ষ
ও
উত্তপ্ত
পানি
পান
করা
উত্তম
জান্নাতের
নিআমতসমূহের অতিথিয়তা উত্তম না যাক্কুম বৃক্ষ
ও উত্তপ্ত পানি পান করা
উত্তম:
'নিশ্চয়
এটি মহাসাফল্য!' এরূপ সাফল্যের জন্যই
‘আমলকারীদের আমল করা উচিত।
আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম
না যাক্কুম বৃক্ষ? নিশ্চয় আমি তাকে যালিমদের
জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষা।
নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের
তলদেশ থেকে বের হয়।
এর ফল যেন শয়তানের
মাথা; নিশ্চয় তারা তা থেকে
খাবে এবং তা দিয়ে
পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত
পানির মিশ্রণ। (সূরা সাফ্ফাত ৬০-৬৭)
দুনিয়াতে আনন্দ
উপভোগকারী
উত্তম
না
পরকালে:
আরবির বাংলা অর্থ:
নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে
তারা মু'মিনদেরকে নিয়ে
হাসত। আর যখন তারা
মু'মিনদের পাশ দিয়ে যেত
তখন তারা তাদেরকে নিয়ে
চোখ টিপে বিদ্রূপ করত।
আর যখন তারা পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসত
তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে
ফিরে আসত।
আর
যখন তারা মু'মিনদেরকে
দেখত তখন বলত, ‘নিশ্চয়
এরা পথভ্রষ্ট'। আর তাদেরকে
তো মু'মিনদের হিফাযতকারী
হিসেবে পাঠানো হয়নি। অতএব আজ মু'মিনরাই কাফিরদেরকে নিয়ে হাসবে। উচ্চ আসনে বসে
তারা দেখতে থাকবে। কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হলো তো? (সূরা
মুতাফফিফীন ২৯-৩৬)
জাহান্নামের আযাব
থেকে
আশ্রয়
কামনা
যে
ব্যক্তি তিন বার আল্লাহর
নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়
তার জন্য জাহান্নাম সুপারিশ
করে :
আরবির বাংলা অর্থ:
“আনাস বিন মালেক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর
নিকট তিনবার জান্নাত কামনা করবে, জান্নাত তার জন্য বলে
যে হে আল্লাহ! তুমি
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
আল্লাহর নিকট তিনবার জাহান্নাম
থেকে আশ্রয় কামনা করে, জাহান্নাম তার
জন্য বলে হে আল্লাহ
তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দাও।” (তিরমিজী ২৫৭২)
জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার কুরআনের কতগুলো আয়াত:
১.
আরবির
বাংলা অর্থ: “আর
তাদের মধ্যে এমনও আছে, যারা
বলে, হে আমাদের রব,
আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও
কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে
আগুনের আযাব থেকে রক্ষা
করুন। (সূরা বাকারা ২০১
)
২.
আর যারা বলে, ‘হে
আমাদের রব! তুমি আমাদের
থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও।
নিশ্চয় এর আযাব হলো
অবিচ্ছিন্ন'। 'নিশ্চয় তা
অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে
অত্যন্ত নিকৃষ্ট'। (সূরা ফোরকান
৬৫-৬৬)
৩.
‘হে আমাদের রব! তুমি এসব
অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান
সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের
আযাব থেকে রক্ষা কর’। ‘হে আমাদের
রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে
প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান
করবে। আর যালিমদের জন্য
কোনো সাহায্যকারী নেই'।
‘হে
আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা
শুনেছিলাম একজন আহ্বানকারীকে, যে
ঈমানের দিকে আহবান করে
যে, ‘তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান
আন'। তাই আমরা
ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব
আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত
করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু
দিন নেককারদের সাথে’।
‘হে
আমাদের রব! আর আপনি
আমাদেরকে তা প্রদান করুন
যার ওয়াদা আপনিআপনি আমাদেরকে দিয়েছেন
আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে
আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না। নিশ্চয় আপনি
অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না'। (সূরা আলে
ইমরান ১১১-১৯৪)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়
জাহান্নামের
আযাব থেকে বাঁচার জন্য
রাসূল নিম্নোক্ত দূয়াসমূহ সাহাবাগণকে কুরআনের সূরার ন্যায় মুখস্ত করাতেন:
কবর থেকে বাঁচার
দোয়া
দাজ্জালের ফিতনা
থেকে
বাঁচার
দোয়া
কবরের আজাব
থেকে
বাঁচার
দোয়া
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)
রাসূলূল্লাহ (সাঃ) সামার থেকে বর্ণনা করেছেন,
তিনি তাদেরকে (সাহাবাগণকে) এ দুয়াটি কুরআনের
সূরার ন্যায় মুখস্ত করাতেন, তোমরা বল: হে আল্লাহ
আমরা আপনার নিকট জাহান্নামের আযাব
থেকে আশ্রয় চাই, আমরা
আপনার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই, আমরা আপনার নিকট
মসিহিদ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই,
আমরা আপনার নিকট জীবন ও
মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।”
(নাসায়ী)
জাহান্নামের গরম
থেকে
আশ্রয়
চাওয়ার
দোয়া
আগুন থেকে
বাঁচার
দোয়া
আরবির বাংলা অর্থ:
“আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: হে আল্লাহ জিবরীল,
মিকাঈল ও ইসরাঈলের প্রভু!
আমি আপনার নিকট জাহান্নামের গরম
থেকে আশ্রয় চাই এবং কবরের
আযাব থেকে আশ্রয় চাই।”
(নাসায়ী ৫৫১৯)
ঘুমানোর আগে
দোয়া
সমূহ
শোয়ার
পূর্বে আল্লাহর আযাব থেকে আশ্রয়
কামনা করার দোয়া
আরবির বাংলা অর্থ:
“হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাঃ
থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি যখন শোয়ার
ইচ্ছা করতেন তখন ডান হাত
স্বীয় গালের নিচে রেখে বলতেন:
হে আল্লাহ যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে
উঠাবেন, সেদিন আমাকে স্বীয় আযাব থেকে রক্ষা
করবেন।” (আবু দাউদ ৫০৪৫)
ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ
আরবির বাংলা অর্থ:
“ইবনে ওমার (রাঃ) রাসূলূল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন,
তিনি যখন বিছানায় শুইতে
যেতেন তখন আল্লাহর শুকুর
করে বলতেন, যিনি আমাকে সমস্ত
মুসিবত থেকে রক্ষা করেছেন,
আমাকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, আমাকে পানাহারপানাহার করিয়েছেন,
ঐ
সত্তার শুকুর যিনি যখন আমার
প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তখন যথেষ্ট পরিমাণে
তা করেছেন, যখন আমাকে দান
করেছেন তখনও যথেষ্ট পরিমাণে
করেছেন, সর্বাবস্থায় শুধু তাঁরই কৃতজ্ঞতা,
হে আল্লাহ! সবকিছুর রব, সবকিছুর মালিক,
সবকিছুর ইলাহ, আমি জাহান্নাম থেকে
তোমার নিকট আশ্রয় চাই।”
(আবু দাউদ ৫০৫৮)
আল্লাহর ক্রোধ
থেকে
বাঁচার
দোয়া
তাহাজ্জুদের
নামাযে আল্লাহর আযাব থেকে আশ্রয়
চাওয়ার দুয়া
আরবির বাংলা অর্থ:
“আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: আমি এক রাতে
রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বিছানায়
অনুপস্থিত পেয়ে তাঁকে খুঁজতে লাগলাম, তখন আমার হাত
রাসূলের পায়ের পাতায় লাগল যা দাড়
করানো অবস্থায় ছিল। তখন তিনি
মসজিদে ছিলেন, (আর সেজদা অবস্থায়)
তিনি এ দুয়া পড়তেছিলেন:
হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির
মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই।
তোমার ক্ষমার ওসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয়
চাই। আর আমি প্রত্যেক
বিষয়ে তোমার নিকটই আশ্রয় চাই। আমি তোমার
প্রশংসা ও গুণগান করার
ক্ষমতা রাখিনা তোমার প্রশংসা তেমনই যেমন তুমি করেছ।”
(মুসলিম ৪৮৬)
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া
জাহান্নামের
আযাব থেকে বাঁচার জন্য
নিম্নের দুয়াটি বেশি বেশি করে
পাঠ করা উচিত:
আরবির বাংলা অর্থ:
“আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: নবী সাঃ বেশির
ভাগ এদুয়া করতেন যে, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও এবং পরকালেও
কল্যাণ দাও এবং আমাকে
জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা
কর।” (মুসলিম)
এক সাথে
কম
পক্ষে
তিন
বার
জাহান্নাম
থেকে
আল্লাহর
নিকট
আশ্রয়
চাওয়া
উচিত:
জাহান্নামের স্তর
কয়টি
উপসংহারঃ
আজকের পোস্টে আমরা জানতে
পারলাম যে, জাহান্নামের স্তর কয়টি, জাহান্নামের আজাবসমূহ কি, জাহান্নামের আজাব থেকে
মুক্তির দোয়া, জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা পাওয়ার পথসমূহ কি কি? ইত্যাদি।
পোস্ট ট্যাগঃ