স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস (islamic status)
স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস (islamic status)
সামুরাতা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
****নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে পার্শ্বদেশের হাড় থেকে। যদি তুমি তাকে সম্পূর্ণ সোজা করতে চাও তবে ভেঙে ফেলবে। সুতরাং তার সাথে নরম ব্যবহার করো, তাহলেই সুখ স্বচ্ছন্দময় জীবন-যাপন করতে পারবে।” (তারগীব ও তারহীব, ইবেন হিব্বান)
(islamic status)
(islamic status)
****এ হাদীসে একথা বলা হয়নি যে, স্ত্রীলোক বাঁকা স্বভাবের হয় এবং পুরুষ বড় সরল সোজা হয়ে থাকে। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বক্তব্যের তাৎপর্য হচ্ছে, অনৈসলামী সমাজ-ব্যবস্থায় নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা হয় না।
কিন্তু তোমরা হচ্ছে। খোদার মু'মিন বান্দা। সুতরাং স্ত্রীদের সাথে তোমাদের উত্তম ব্যবহার করা উচিত। অতএব তোমরা মেয়েদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। কোন কোন বর্ণনায় হাদীসটির শেষ অংশ নিম্নরূপ:
****অর্থাৎ 'তুমি নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো এবং অন্যকেও তার স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য তাকিদ করো।'
(islamic status bangla)
সন্তানের প্রতি বাবার দায়িত্ব
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'তোমরা নিজের সন্তানের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করো এবং তাদের উত্তম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দান করো।” (তারগীব ও তারহীব, ইবনে মাজা)
ইসলামে শ্রমের মর্যাদা
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন লোকদের উপর কর্তৃত্বকারী বান্দার কাছে থেকে তার অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে অবশ্যই হিসাব গ্রহণ করবেন। অধীনস্থ লোকদের উপর সে আল্লাহর দ্বীন জারী করেছে নাকি তা বরবাদ করে দিয়েছে সে সম্পর্কে তার কাছ থেকে জবাবদিহী নেয়া হবে। এমনকি নিজের পরিবার পরিজন সম্পর্কেও তাকে বিশেষভাবে প্রশ্ন করা হবে।” (মুসনাদে আহমদ)
গরিবের প্রতি দয়া করা মিসকীনদের অধিকার
হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘সব থেকে উত্তম কাজ কি? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন, 'কোন মুসলমানের অন্তরকে সন্তুষ্ট করে দেয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
যদি সে ক্ষুধার্ত হয় তবে তাকে আহার করাও; যদি তার কাপড় না থাকে তবে তাকে পরিধানের কাপড় দাও, এবং যদি তার কোন প্রয়োজন অপূর্ণ থাকে তা পূর্ণ করে দাও।” (তারগীব, তাবরানী)
মুসলমানের অভাব পূর্ণ করা
হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় আহার করালে আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।
কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের উত্তম পানীয় পান করাবেন। কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র পরালে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতী পোশাক পরাবেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি নিজের ভাইকে পেট ভরে আহার করাবে ও পানি দিয়ে তার পিপাসা মিটাবে আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন দোযখ থেকে সাত খন্দক দূরে রাখবেন। এক খন্দক থেকে অন্য খন্দকের দূরত্ব হবে পাঁচশ বছরের রাস্তা।
নেক আমলের ফজিলত বা উদ্বুদ্ধ করার ফল
হযরত আবু হোরায়ারা রাদিয়াল্লাহু আনহ কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোন ব্যক্তি কাউকে নেক কাজে উদ্বুদ্ধ করলে উদ্বুদ্ধকারী ব্যক্তি কাজটি সম্পন্নকারী ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে। আল্লাহতায়ালা বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা বড়ই পছন্দ করেন।” (তারগীব ও তারহীব)
অধীনস্থদের প্রতি কোমল ব্যবহার করার হুকুম
হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “তিনি বলেন, 'নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে।
লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, 'হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), আপনি কি আমাদের বলেননি, অন্যান্য উম্মতের চাইতে আপনার উম্মতের মধ্যে ইয়াতীয় ও সেবকদের সংখ্যা বেশী হবে? তিনি উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ আমি তোমাদের এ কথা বলেছি।
সুতরাং তোমরা তাদের সাথে সেই রকম ব্যবহার করো, যেমন ব্যবহার তোমরা নিজের সন্তান-সন্ততির সাথে করে থাকো। তাদের সেই খাদ্য খাওয়াও যা তোমরা খাও।' লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, 'দুনিয়ার কোন্ জিনিস (আখিরাত) আমাদের উপকারে আসবে?' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সেই ঘোড়া, যাকে তোমরা বেঁধে রেখে এই উদ্দেশ্য খাওয়াও যে, তার উপর চড়ে তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।
যারা তোমাদের কাজ করে দেয় সেসব কর্মচারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। আর যদি সে নামাযী হয়, তবে সে তো তোমাদের উত্তম ব্যবহারের আরও বেশী হকদার।” (তারগীব ও তারহীব, আহমদ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী)
- বিস্তারিতঃ এ হাদীসে চাকর ও কর্মচারীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘরের স্থায়ী চাকরদের ব্যাপারেও একই হুকুম।
সাধ্যমত বোঝা চাপানো
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের গোলামদের এ হক আছে যে তোমরা তাদের খাদ্য ও পানীয় দেবে, তাদের পরার কাপড় দেবে, আর তাদের ওপর কাজের এমন বোঝা চাপাবে, যা বহন করা তাদের সাধ্যের মধ্যে।
যদি কোন ভারী কাজ তাদের উপর অর্পন করো তবে তোমরাও তাদের সাহায্য করো। হে আল্লাহর বান্দারা! তারাও তোমাদের মত আল্লাহর সৃষ্ট জীব, তারাও তোমাদের মত মানুষ। তাদেরকে যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।' (তারগীব ও তারহীব, ইবনে হিব্বান)
অধীনস্থ কর্মচারীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার পুরস্কার
হযরত ওমর বিন হোরাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের কাজ যতটা লঘু করবে, তোমাদের আমলনামায় ততটাই সওয়াব ও পুরস্কার লেখা হবে।” (তারগীব ও তারহীব)
পশু পাখির প্রতি ভালোবাসা
হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে একটি গাধা যাচ্ছিল, গাধাটির মুখমন্ডলে ছিল আঁচড়ের দাগ। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তার উপর আল্লাহর লানত, যে এ কাজ করেছে।'
এরপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুর মুখমন্ডলে দাগ বা আঘাত না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ
পশু-পাখির উপর নিশানা-বাজী করা নিষেধ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, “একদিন তিনি কয়েকজন কোরাইশ বালকদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা একটি পাখি বা মুরগীকে বেঁধে রেখে তাকে নিশানা বানিয়ে তীরন্দাজি অভ্যাস করছিল।
পাখির মালিকের সঙ্গে বালকেরা চুক্তি করে নিয়েছিল, যে তীরটি পাখির ক্ষতি করবে সে তীরটি তাকে দিয়ে দেয়া হবে।
ছেলেরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে দেখে এদিক ওদিক সরে গেল। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বললেন, ‘কে এ কাজ করলো? যে এ কাজ করেছে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ! যে ব্যক্তি কোন প্রাণীকে নিশানা বানায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর লানত করেছেন।” (তারগীব তারহীব, বোখারী)
একটি উটের ঘটনা
ইয়াহ ইবনে মুররা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে বসেছিলাম। একটি উট দৌড়ে এসে হুজুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে গেল। তার দু'চোখ থেকে তখন অঝোর ধারায় অশ্রু বইছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, 'যাও, দেখো এটি কার চট? এর সঙ্গে অবশ্যই কিছু ঘটেছে।'
আমি উটটির মালিকের সন্ধানে চলে গেলাম। জানা গেল, উটটি একজন আনসারীর। আমি সে আনসারীকে ডেকে হুজুরের খেদমতে হাজির করলাম। নবীজি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার উটের এ অবস্থা কেন?’ আনসারী উত্তরে বললেন, 'উটটি কেন কাঁদছে আমি জানিনা।
এ উটটিকে আমি কাজে ব্যবহার করতাম। আমার খেজুর গাছ ও বাগানে এ উটের সাহায্যে আমি পানি সিঞ্চন করতাম। উটটি মশক ভরা পানি বহন করে বাগানে পৌঁছে দিত। এখন ও আর পানি বহন করতে পারে না। তাই গত রাতে আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওটাকে জবেহ করে মাংস ভাগ করে নেবো।'
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তোমরা একে জবেহ করো না। হয় আমাকে বিনা মূল্যে দিয়ে দাও নইলে আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও।' আনসার রাদিয়াল্লাহু উত্তর দিলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), আপনি এটা বিনামূল্যেই কবুল করুন।'
রাবী (ইবনে মূরা রাদিয়াল্লাহু) বলেন, 'হুজুর উটটির গায়ে বায়তুলমালের পশুর ছাপ লাগালেন, তারপর সেটাকে বায়তুলমালের পশুদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।' (তারহীব ও তারগীব, আহমদ)
জবেহ করার পূর্বে ছুরি ধার করে নাও
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি একটি বকরীকে মাটিতে শুইয়ে তার ওপর একটি পা দিয়ে চেপে ধরে নিজের ছুরিতে ধার দিচ্ছিল। বকরীটি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল তার কাজ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তোমরা যবেহ করার পূর্বে বকরীটি মরবে না তো? তুমি কি এটাকে দুই বার মারতে চাও!' অন্য এক বর্ণনার ভাষা হচ্ছে, 'তুমি কি এটাকে বার বার মৃত্যুর স্বাদ দিতে চাও? এটাকে শোয়ানোর পূর্বেই তুমি নিজের ছুরি ধার দিয়ে নাওনি কেন?'
এক পশুকে অন্য পশুর সামনে যবেহ করা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুকে ধারালো ছুরি দিয়ে যবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এও নির্দেশ দিয়েছেন, যেন এক পশুকে অন্য পশুর সামনে যবেহ করা না হয়।
এ ছাড়া তিনি এই হুকুমও দিয়েছেন, 'যখন তোমরা কোন পশু যবেহ করবে তখন তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধা করবে। (বেশীক্ষণ কোন জানোয়ারকে কষ্ট দিও না)।”
হযরত শাররিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, 'যে ব্যক্তি একটি চড়ুই পাখীকে অনর্থক মারবে কিয়ামতের দিন সেই পাখি আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে বলবে, 'হে আমার রব, অমুক ব্যক্তি আমাকে অনর্থক হত্যা করেছিল, মাংস খাবার জন্য আমাকে মারেনি।”