জাহান্নামের আগুনের রং কেমন হবে
জাহান্নামের
আগুন স্বয়ং আলকাতরার চেয়ে কাল অন্ধকার হবে ফলে সেখানে নিজের হাতকেই চিনা যাবে না।
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: তোমরা কি জাহান্নামের আগুনকে
তোমাদের এ আগুনের ন্যায়
মনে কর? বরং তা
হবে আলকাতরার চেয়েও কাল'। (মালেক)
জাহান্নামে (Hell) নিয়ে
যাবে
ফেরেশতাগণ
কাফিরকে উপুড় করে টেনে জাহান্নামে
নিয়ে যাবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
সেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে
জাহান্নামে নেয়া হবে। (বলা হবে) জাহান্নামের
যন্ত্রণা আস্বাদন কর। (সূরা কামার
৪৮)
জাহান্নামে (Hell) নিক্ষেপ করা হবে
কোনো
কোনো মুজরিমকে কবর থেকে উঠিয়েই
উপুড় করে টেনে নিয়ে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে:
যে
কাফিরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে
যাওয়া হবে সে অন্ধ,
মুক, বধিরও হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
আর আমি কিয়ামতের দিনে
তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে,
অন্ধ, মূক ও বধির
অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ
হবে তখনই আমি তাদের
জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব।
(সূরা বনী ইসরাঈল ৯৭)
কোনো
কোনো কাফিরকে ফেরেশতাগণ জিঞ্জিরাবদ্ধ করে টেনে নিয়ে
যাবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে,
তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া
হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে
অগ্নিতে।” (সূরা মু'মিন
৭১-৭২)
জাহান্নামে (Hell) নিক্ষেপ করা হবে
কাফিরের
মাথায় উত্তপ্ত পানি প্রবাহিত করার
জন্য ফেরেশতা তাকে জাহান্নামের মাঝখানে
টেনে নিয়ে যাবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“(বলা হবে) তাকে ধর
এবং টেনে নিয়ে যাও
জাহান্নামের মধ্যস্থলে, অতঃপর তার মস্তকের ওপর
ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে
শাস্তি দাও।” (সূরা দুখান: ৪৭-৪৮) মাসআলা-৩১৪
: কোনো কোনো মুজরিমকে তাদের
পা ও মাথার ঝুঁটি
ধরে পাকড়াও করা হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
অপরাধিদেরকে চেনা যাবে তাদের
চিহ্নের সাহায্যে। অতঃপর তাদেরকে মাথার অগ্রভাগের চুল ও পা
ধরে টেনে নেয়া হবে।
সুতরাং তোমাদের রবের কোনো নিআমতকে
তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ? (সূরা রাহমান ৫৫:৪১-৪২)
মাথার ঝুঁটি
ধরে
হেঁচড়িয়ে
জাহান্নামে
নিয়ে
যাবে
আবু
জাহেলকে ফেরেশতারা মাথার ঝুঁটি ধরে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে
নিয়ে যাবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত
না হয়, তবে আমি
তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব মস্তকের সম্মুখ
ভাগের কেশ গুচ্ছ ধরে।
মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠদের কেশ গুচ্ছ।” (সূরা
আলাক ১৫-১৬)
উপুড় করে
হেঁচড়িয়ে
জাহান্নামে
নিয়ে
যাবে
লোক
দেখানো ইবাদত কারীদেরকে ফেরেশতাগণ উপুড় করে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে
নিয়ে যাবে:
আল্লাহ
মুজরিমদেরকে উপুড় করে চালাতে এমনভাবে
সক্ষম যেমন তাদেরকে দুনিয়াতে
দু'পায়ে চালাতে সক্ষম
আরবির বাংলা অর্থ:
“আনাস বিন মালেক (রা)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক
ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)! কিয়ামতের
দিন কাফিরকে কিভাবে উপুড় করে চালানো হবে?
তিনি বললেন: যিনি তাকে দুনিয়াতে
দু'পায়ের ওপর চালিয়েছেন, তিনি
কি তাকে কিয়ামতের দিন
উপুড় করে চালাতে সক্ষম
নন? কাতাদা বলেন: আমাদের রবের কসম! অবশ্যই
(তিনি তাতে সক্ষম)।”
(মুসলিম ২৮০৬)
জাহান্নামে আগুনের
পাহাড়ে
চড়ান
জাহান্নামে
কাফিরকে আগুনের পাহাড়ে চড়ানোর মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“আমি অতি সত্তর তাকে
শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব।” (সূরা মুদ্দাস্সির ১৭)
“সউদ”
জাহান্নামের একটি পাহাড়ের নাম
যেখানে আরোহণ করতে কাফিরেরকাফিরের সত্তর
বছর সময় লাগবে, এর
পর ওখান থেকে নিচে
পড়ে যাবে, পরে আবার সত্তর
বছর সময় নিয়ে সেখানে
আরোহণ করবে, এভাবে এ ধারাবাহিক শাস্তিতে
সে নিমজ্জিত থাকবে:
জাহান্নামের একটি
পাহাড়
সাউদ
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবু সাঈদ (রা) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেন: জাহান্নামের
একটি উপত্যকা যার চূড়ায় আরোহণ
করার পূর্বে, কাফির চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাতে
পাক খেতে থাকবে। আর
‘সাউদ’ জাহান্নামের একটি পাহাড়ের নাম,
তাতে আরোহণ করতে সত্তর বছর
সময় লাগবে, অতঃপর সেখান থেকে নিচে পতিত
হবে, কাফির সর্বদা এ আযাবে নিমজ্জিত
থাকবে।” (আবু ইয়ালা ১৩৮৩)
জাহান্নামে আগুনের
খুঁটিতে
বেঁধে
কোনো
কোনো মুজরিমদেরকে জাহান্নামে লম্বা লম্বা খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে
শাস্তি দেয়া হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“হুতামা কি তাকি তুমি
জান? এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত
অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস
করবে, নিশ্চয়ই তা তাদেরকে পরিবেষ্টন
করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।” (সূরা হুমাযাহ ৫-৯)
মুজরিমদেরকে খুব
মজবুতভাবে
বেঁধে
কোনো
কোনো মুজরিমদেরকে খুব মজবুতভাবে বেঁধে
রাখা হবে:
আরবির বাংলা অর্থ:
“সেদিন তাঁর শাস্তির মত
শাস্তি কেউ দিতে পারবে
না এবং তাঁর বন্ধনের
মত বন্ধনও কেউ দিতে পারবে
না।” (সূরা ফাজর ২৫-২৬)
জাহান্নামে লোহার
হাতুড়ি
জাহান্নামে
লোহার হাতুড়ি ও গুর্জের আঘাতের
মাধ্যমে শাস্তি জাহান্নামে কাফির ও মুশরিকদেরকে গুর্জ
ও লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে। কুরআন ও
হাদীস উভয়েই এর প্রমাণ রয়েছে:
আল্লাহর বাণী:
আরবির বাংলা অর্থ:
“আর তাদের জন্য থাকবে লৌহ
গুর্জসমূহ।” (সূরা হাজ্জঃ ২১)
হাদীসে
নবী সাঃ এরশাদ করেন; কাফিরদেরকে মারার গুর্জের ওজন এত বেশি
হবে যে, যদি একটি
গুর্জ পৃথিবীর কোথাও রাখা হয়, আর
পৃথিবীর সমস্ত জ্বিনnull ও ইনসান তা
উঠানোর জন্য চেষ্টা করে,
তাহলে তারা তা উঠাতে
পারবে না। (মোসনাদ, আবু
ইয়ালা)
জাহান্নামের পূর্বে
কবরেও
কাফিরদের
জাহান্নামের
পূর্বে কবরেও কাফিরদেরকে গুর্জ ও হাতুড়ি দিয়ে
মারা হবে। কবরের আযাবের
বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূল
সাঃ বলেন: মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন
উত্তরে নিষ্ফল হওয়ার পর কাফিরদের জন্য
অন্ধ ও বধির ফেরেশতা
নিয়োগ করা হবে, তাদের
নিকট লোহার গুর্জ থাকবে,
আর
তা এত ভারী হবে
যে, যদি কোনো পাহাড়ের
ওপর তা দিয়ে আঘাত
করা হয়, তাহলে পাহাড়
অণু অণু হয়ে যাবে।
ঐ গুর্জ দিয়ে অন্ধ ও বধির
ফেরেশতা তাকে মারতে থাকবে
আর সে চিল্লাতে থাকবে।
নবী
সাঃ বলেন: কাফেরের চিল্লানোর আওয়াজ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে
মানুষ ও জ্বিন ব্যতীত
সমস্ত সৃষ্টি জীব শুনে। ফেরেশতার
আঘাতে কাফির মাটির ন্যায় অণু অণু হয়ে
যাবে, তখন সেখানে আবার
রূহ ফেরত দেয়া হবে।
(মোসনাদ আবু ইয়ালা)
জাহান্নামের শাস্তি
কবরের
চেয়ে
কয়েকগুণ
বেশি
কিয়ামত
পর্যন্ত বারংবার এ অবস্থা চলতে
থাকবে।
জাহান্নামের
শাস্তি কবরের শাস্তির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কঠিন ও
বেদনা দায়ক হবে। কবরে হাতুড়ি
ও গুর্জ দিয়ে আঘাতকারী ফেরেশতা যদি অন্ধ ও
বধির হয় তাহলে জাহান্নামের
ফেরেশতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন:
আরবির বাংলা অর্থ:
“তাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়
ও কঠোর nullস্বভাব বিশিষ্ট
ফেরেশতা।” (সূরা তাহরীম ৬)
জাহান্নামীদের প্রথম
গ্রুপ
যখন
যাবে
ইকরামা
(রা) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: জাহান্নামীদের প্রথম গ্রুপ যখন সেখানে যাবে
তখন দেখবে, যে দরজার সামনে
চার লক্ষ ফেরেশতা তাদেরকে
শাস্তি দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
যাদের চেহারা হবে অত্যন্ত ভয়ানক
ও খুবই কাল।
আল্লাহ
তাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া
বের করে নিয়েছেন, ফলে
তারা হবে অত্যন্ত নির্দয়।
এ ফেরেশতাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট হবে এই যে,
আরবির বাংলা অর্থ:
“ঐ ফেরেশতারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ
অমান্য করে না, আর
তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া
হয় তারা তাই করে।"
(সূরা তাহরীম ৬)
কঠিন পদ্ধতিতে
শাস্তি
দিতে
থাকবে
অর্থাৎ:
আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে যেমন আজাব দিতে
নির্দেশ দিয়েছেন তারা সাথে সাথে
তেমন আজাবই দিতে শুরু করবে।
এক পলকের জন্যও চিন্তা বা বন্ধ করবে
না। এ ফেরেশতারা কাফিরদেরকে
এত কঠিন কঠিন পদ্ধতিতে
শাস্তি দিতে থাকবে যে,
বড় বড় পাপিষ্টদের কলিজা
চালনির নায় ছিদ্র হয়ে
যাবে। (ইবনে কাসীর)
জাহান্নামের শাস্তি
দেখে
এ
হলো কাফিরদের পরিণতি ও তাদের কুফরীর
শাস্তি। মূলত কাফির আল্লাহর
নিকট পৃথিবীর সর্বাধিক পরিত্যাজ্য ও লাঞ্ছিত সৃষ্টি।
পৃথিবীতে ঈমানের সম্পদের চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ
নেই, হায়! যদি মুসলমানরা পৃথিবীতে
এ সম্পদকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারতো! কাফিররা
তো নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিন (জাহান্নামের) শাস্তি
দেখে এ কামনা করবে
যে,
আরবির বাংলা অর্থ:
“হায়! তারা যদি সৎপথ
অনুসরণ করতো।” (সূরা কাসাস ৬৪)
লোহার ভারি
ভারি
হাতুড়ি
লোহার
ভারি ভারি হাতুড়ি ও
গুর্জের আঘাতের মাধ্যমে মুজরিমদের মাথা দলিত করা
হবে:
জাহান্নাম থেকে
বের
হতে
চাইবে
আরবির বাংলা অর্থ:
“আর তাদের জন্য থাকবে লৌহ
গুর্জসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর
হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে
চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে
দেয়া হবে। তাদেরকে বলা
হবে আস্বাদন কর দহন যন্ত্রণা।”
(সূরা হাজ্জ ২১-২২)
জাহান্নামে
কাফিরকে আঘাত করার জন্য
যে গুর্জ ব্যবহার করা হবে তার
ওজনওজন এত ভারি হবে
যে, পৃথিবীর সমস্ত জ্বিন ও ইনসান মিলে
তা উঠাতে চাইলে উঠানো সম্ভব হবে না
জাহান্নামে কাফিরকে
মারার
জন্য
আরবির বাংলা অর্থ:
“আবু সাঈদ খুদরী (রা)
নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন,
তিনি বলেন: জাহান্নামে কাফিরকে মারার জন্য ব্যবহৃত গুর্জের
একটি পৃথিবীতে রাখা হলে, সমস্ত
জ্বিন ও ইনসান মিলে
তাকে উঠানোর চেষ্টা করলে তা উঠাতে
পারবে না।” (আবু ইয়ালা ১৩৮৮)
জাহান্নামে সাপ
ও
বিচ্ছুর
ছোবলের
মাধ্যমে
আজাব
জাহান্নামে
বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছুর
ছোবলের মাধ্যমেও শাস্তি হবে। সাপ ও
বিচ্ছুর উভয়কেই মানুষের দুশমন মনে করা হয়,
আর এ উভয়ের নামের
মাঝেই এত ভয় ও
আতংক রয়েছে যে, যদি কোনো
স্থান সাপ ও বিচ্ছুর
অবস্থান সম্পর্কে মানুষ অবগত থাকে, তাহলে
সেখানে মানুষের বসবাসের কথাতো অনেক দূরে, বরং
কোনো ব্যক্তি ঐ দিক দিয়ে
রাস্তা অতিক্রমের ঝুঁকিও নিতে রাজি হবে
না।
জাহান্নামে সাপের
আকৃতি,
প্রকৃতি,
রং
কোনো
কোনো সাপের আকৃতি, প্রকৃতি, রং, লম্বা, নড়াচড়া,
স্বাভাবিকতা এমন থাকে যে,
তা দেখা মাত্রই মানুষ
সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়। সাপ
বা বিচ্ছু সর্বাধিক কতটা বিষাক্ত হতে
পারে? তার সঠিক জ্ঞান
একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে
না, কিন্তু অভিজ্ঞতার আলেকে এবং বিভিন্ন পুস্তকে
বর্ণিত ব্যাখ্যার আলোকে, এ সিদ্ধান্ত নেয়া
দুষ্কর নয় যে, সাপ
অত্যন্ত ভয়ানক ও মানুষের জানের
শত্রু।
দক্ষিণ পূর্ব ফ্রান্সে বিদ্যমান একটি বিষাক্ত সাপ সম্পর্কে কিছু কিছু সংবাদ সূত্রে বলা হয়েছে, সেখানকার এক একটি সাপ দেড় মিঃ লম্বা। আর এক একটি সাপের বিষ দিয়ে এক সাথে পাঁচজন লোককে নিহত করা সম্ভব।'
পোস্ট ট্যাগঃ