তাকদীর অর্থ কি
তাকদীর অর্থ
ভাগ্য, কপাল বা নিয়তি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা’আলাই এ
বিশ্বলোককে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই বিশ্বলোকের নিয়ন্ত্রণকারী ও পরিচালক আল্লাহ্ তা'আলা এ বিশ্বলোকের প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গতিধারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন; একে আল্-কাদর বলা হয়।
বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা'আলার জ্ঞানের বাইরে ও তাঁর ইচ্ছার ব্যতিক্রম কিছুই ঘটতে পারে না প্রতিটি প্রাণীর শেষ পরিণতিই আল্লাহ্ তা'আলার জানা আছে। (আল-কুরআন (Quran): সূরা আল-ফুরকান ২, সূরাহ আল্-আহযাব ৩৮)
মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা
কিন্তু একথার মানে এ নয় যে, মানুষের কোন ইচ্ছার স্বাধীনতা (Freedom) নেই আমরা জানি যে, মানুষ হচ্ছে এ পৃথিবীর বুকে আল্লাহর খালীফাহ্ (প্রতিনিধি) আমরা আরো জানি যে, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে কোন কাজ করতে বাধ্য করেন না। তাঁকে মেনে চলা বা অমান্য করার বিষয়টি আমাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আমরা তাঁকে মানব, কি মানব না তা তিনি জানেন। কিন্তু আমরা কি করতে যাচ্ছি তা আল্লাহর জানা থাকার কারণে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা ব্যাহত হয় না।মানুষ জানে না তার পরিণতি কি হবে, কিন্তু আল্লাহ্ তা জানেন।মানুষের চলার পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ হস্তক্ষেপ করেন না। অর্থাৎ আমরা আমাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি নির্ধারণের ব্যাপারে স্বাধীন।
শেষ বিচারের দিনে আমাদের নিয়্যতের (মানসিক সিদ্ধান্তের) ভিত্তিতে আমাদের বিচার করা হবে। আমরা যদি আল্লাহ্ তা'আলার দেয়া হেদায়াত অনুসরণ করি তাহলে আমাদের পুরস্কার দেয়া হবে, অন্যথায় আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
আল্কাদরে বিশ্বাস স্থাপন করে কার্যতঃ আমরা এ মর্মে সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ্ তা'আলাই তাঁর সৃষ্ট বিশ্বজাহানের সবকিছুর ও সকল কাজের নিয়ন্ত্রণকারী। কোনটি ভাল কোনটি মন্দ তা তিনিই নির্ধারণ করেন।
তাকদীর
আল্লাহ্ তা'আলা সকল মানুষের ভাগ্য সম্বন্ধে অবগত আছেনএর মানে এ নয় যে, আমরা যা করতে চাই তা-ই করতে পারব, যেন আমাদের ক্ষেত্রে যা-ই ঘটুক তাতে কিছুই আসে যায় না। বরং আমাদেরকে অবশ্যই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলার দেয়া হেদায়াতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। আমরা ভাল-মন্দ বেছে নিতে পারি।পৃথিবীর বুকে আমরা যে কাজ করছি তার ভিত্তিতে শেষ বিচারের দিনে আমাদের বিচার করা হবে।
আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছু জানেন ৷ তাই একমাত্র তিনিই সঠিকভাবে তাঁর প্রজাদের অর্থাৎ মানুষ ও জীনের বিচার করতে পারেন। তিনি মানব-জাতিকে তাঁর দেয়া হেদায়াত অনুসরণ করতে বলেছেন।কারণ, তাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সাফল্যের জন্যেই এ জীবনবিধান দেয়া হয়েছে।কিন্তু কাকে পুরস্কার দেয়া হবে আর কাকে দেয়া হবে না তা পুরোপুরি আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহের ওপরই নির্ভর করে।
মানুষের ভাগ্য
কার ভাগ্যে কি ঘটবে আল্লাহ্ তা'আলা তা অবগত আছেন, কিন্তু আমরা অবগত নই।এই ভবিষ্যৎজ্ঞান আল্লাহ্ তা'আলার গুণাবলীর (ছিফাত্) অন্যতম।
অনেক সময় এমন সব ঘটনা সংঘটিত হয় আমাদের দৃষ্টিতে যার কোন অর্থ নেই বলে মনে হয়।প্লাবন, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি কেন সংঘটিত হয়? কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ অনাহারে মারা যায়? মানুষ কেন দুঃখ কষ্টে ভোগে? কি কারণে একজন মানুষ ভাল হয় এবং আরেকজন মানুষ অপরাধী হয়?
আমরা এসব প্রশ্নের সবগুলোর উত্তর জানি না। বিশ্বজগত সম্বন্ধে আমাদের খুব অল্পই জানা আছে।কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছুই জানেন।আমরা যেসব সমস্যা মোকাবিলা করি বা যেসব খারাপ ঘটনা ঘটতে দেখি সেজন্য আমরা যদি আল্লাহকেদোষারোপ করি তো ভুল করব। কেননা আমরা এসবের পিছনে নিহিত কারণ জানি না।
ঈমান বা বিশ্বাস
iman
আমাদের অবশ্যই সর্বজ্ঞানী স্রষ্টার ওপর দৃঢ় ঈমান (iman) বা বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন।বিপদাপদ ও দুঃখ-দুর্দশায় মানুষের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আল্লাহ্ তা'আলার কার্যাবলীর অনেক কিছুই বুঝার ও ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আমাদের নেই।তাই মানুষের কোন স্বাধীনতা (Freedom) নেই এবং আমরা যা কিছু করছি তা করতে আমরা বাধ্য-এ ধরনের যুক্তি দেখানো একান্তই অর্থহীন।
আমরা কি করব ও কি করব না সে ব্যাপারে আমরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।তাই আমরা আমাদের নিজেদের কাজের জন্য দায়ী আমাদের কাজকর্মের এ স্বাধীনতার সাথে আল্লাহ্ তাআলার ভবিষ্যৎজ্ঞানের কোন বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ্পাক আমাদেরকে ইসলামের নিয়মকানুন গুলো রক্ষা করে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন!
সংগৃহীতঃ অনলাইন
পোস্ট ট্যাগঃ